আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

সময়: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৮:০২ অপরাহ্ণ

লেখক:

উৎস: ফেসবুক ওয়াল থেকে

টপিক: , , , ,

ট্যাগ: 

লেখক প্রোফাইল 

বড় করুন

ছোট করুন

শাকিল বলল – কিন্তু গুরুজী, আমার না খুব ভয় ভয় লাগছে।
শুনেছি মন্সুর হাল্লাজ নামে এক ব্যক্তি কী যেন বলেছিলেন। অনেকেই ঐ সব কথাবার্তা পছন্দ করে না। আপনি কিন্তু নতুন কিছু বলবেন।
– বুঝতে পেরেছি। আসলে তুমি হতো জানো না যে আমি এই বিষয়ে যখন কথা বলি তখন আল্লাহ ঈশ্বর গড এই শব্দগুলোই এড়িয়ে চলি। দেখো, আমি না জানি আল্লাহকে না জানি ঈশ্বর বা গডক। তাদেরকে নিয়ে অজ্ঞতার মধ্যে কেন টানাটানি করব?
– হায় আল্লাহ! তাহলে আপনি যা বলবেন তা কি আপনার নিজের তত্ত্ব? মানে – মনে কিছু করবেন না, গুরুজী – তা কি আপনার মনগড়া কথা?
– এ বার মন খোলা রেখে তুমি সত্য সঠিক প্রশ্নটাই করে ফেলেছ। আমি যা বলব তা সত্য কি না তা তোমাকে ভাবানোর আগে আমি বলে নিতে চাই যে, যা সত্য আমি কেবল তাই বলব। নইলে তো আল্লাহ আমার কণ্ঠশিরা ছিড়ে ফেলবেন। সে ভয় কি আমার নেই?
– কিন্তু আল্লাহর প্রসংগে না গিয়ে আপনি সেই সত্য কিভাবে উদ্ঘাটন করবেন আর কিভাবেই তা তুলে ধরবেন, গুরুজী? আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।
– শুধু তাই নয়, আমি যা বলব তার পক্ষে আলাদা করে কোনো প্রমাণ দেয়ার প্রয়োজন হবে না।
– তাহলে তো আপনার কাছে আসাই আমার ঠিক হয়েছে, গুরুজী। কিন্তু আমার জানতে মন চাচ্ছে আপনি কি কোরান হাদিসের উক্তি ব্যবহার করবেন না?
– কোনো প্রয়োজন হবে না। কারণ আমি ই আমাকে জানতে চাচ্ছি। এখানে অন্য কিছু না আসলেও চলবে। তবে…
– তবে? গুরুজী।
– তবে সেই সত্য তুমি যখন জানবে তখন তার আলোকে কোরান শুধু নয়, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের সত্যতা যদি তুমি উপলব্ধি করো তাহলে তা হবে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার এবং তখন তোমার ইমান বৃদ্ধি পাওয়ার আর কোনো সুযোগ ই থাকবে না।
– হায় হায়, এ আবার কেমন কথা, গুরুজী? আমি কি কাফের হয়ে যাবো?
– দেখো, হজরত আলী (রা) বলেছিলেন যে তিনি যদি আল্লাহকে দেখতে পেতেন তবুও তার ইমান এক বিন্দু বৃদ্ধি পেত না। তিনি কি একটা রহস্যময় কথা বলেন নি?
– গুরুজী, আমি তো ভাষাহীন হয়ে যাচ্ছি। মানুষের জ্ঞান বাড়ে, সম্পর্কের শক্তি বা আস্থা বাড়ে, কোরান অনুযায়ী ইমান ও বাড়ে। অথচ তাঁর ইমান আর বাড়বে না… তাহলে আমার জানতে মন চাচ্ছে ইমান ই বা কী জিনিস। সত্য হিসেবে শ্রদ্ধা করে কোনো বর্ণনাগুচ্ছ এবং আদেশ-নিষেধ মান্য করা যে ইমান, তা সত্য, তবে আপনার এই কথা শুনে মনে হচ্ছে এর বাইরেও ইমানের অনেক অর্থ ও রহস্য আছে।
– নিশ্চয়ই তাই। আপাতত ইমান আর বিশ্বাস এক জিনিস হিসেবে ধরে নিয়েই বলছি – বিশ্বাস করা আর বিশ্বাসের রহস্য জানা অর্থাৎ বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হওয়া এক কথা নয়। ইনশা আল্লাহ এ নিয়ে আমরা এক দিন আলোচনা করব।
– গুরুজী, আমি এই ভেবে অবাক হই যে যা এক জন অবিশ্বাসী জানে না, আমিও তা জানি না। অর্থাৎ কারো জ্ঞানের মধ্যেই তা নেই। অথচ আমি তা সত্য বলে মেনে নিতে পারছি কিন্তু সে তা পারছে না।
– নিশ্চয়ই এটা মহাবিশ্বের অন্তিম এক রহস্য। কিন্তু এখানে তোমার ও একটা ভুল হচ্ছে।
– কেমন?
– তুমি বিশ্বাস করতে পারছ বলে নিজেকে বিশ্বাসী ভাবছ। আর সে বিশ্বাস করতে পারছে না বলে তুমি তাকে অবিশ্বাসী ভাবছ। কিন্তু তুমি বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও, বিশ্বাস করা কাকে বলে তা জানলেও, বিশ্বাস কাকে বলে তা কিন্তু তুমি নিজেই জানো না!
– হায় আল্লাহ! আপনি এই জঘন্য সত্য কথাটা কিভাবে বললেন, গুরুজী? আপনি কী? মানুষ না কি অন্য কিছু?
– আমি এক জন অন্ধ মানুষ। তাই আমার কোনো কিছু জানার দরকার হয় না। আল্লাহর দয়ায় বিশ্বাস আমাকে ধরা দিয়েছে। নইলে আমার জ্ঞান আমার কোনো কাজে আসত না।
– গুরুজী, বিশ্বাস কাকে বলে এ নিয়ে আমি বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক দার্শনিক মহাগ্রন্থ পড়েছি – বার্ট্রান্ড রাসেল, কার্ল পপার প্রমুখ।
– আমরা যা নিয়ে কহা বলছি তার সাথে সেই সব আলোচনার কোনো সম্পর্কই নেই।
– মাই গড! তাহলে তো জ্ঞানী হয়ে আপনার কাছে এসেও কোনো লাভ নেই।
– সমস্যা নেই। জ্ঞানী না হয়ে অন্তত ফিরে যাচ্ছ না, এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারো।
– গুরুজী, আমার কেমন যেন একটা উদ্ভট পুলক লাগছে। যে জ্ঞান অর্জন করার জন্য আগের যুগে মানুষ রাজ্য ত্যাগ করেছেন, সর্বস্ব দান করে গুরুদক্ষিণা দিয়েছেন, আপনার কাছে তা ফ্রিতেই পাওয়া যায়। বরং আপনি উলটো চা-পান খাইয়েও থাকেন।
– তুমি এমনভাবে বিষয়টাকে দেখছ যেন তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো এই জ্ঞান পাওয়া। অথচ আমি দেখেছি যে যারা নিজেদ্রকে ধার্মিক বলে পরিচয় দেয় তাদের প্রায় শতভাগ ই জীবন-মৃত্যু তথা মহাবিশ্বের মৌলিক জ্ঞান দ্বরা আকৃষ্ট হয় না।
– গুরুজী, বস্তুবাদী ধার্মিক হিসেবে এমি এতোদিন জান্নাতের অনন্ত জীবন, ভোগ-সম্ভার ইত্যাদি দিয়েই আকৃষ্ট হয়েছি। পেট পুরে খেয়ে কয়েক বার দরুদ শরীফ পাঠ করেই ভোগের দায় সেরে নিয়েছি। ইসলাম সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু কোরান দ্বারা আকৃষ্ট হই নি।
– অথচ তোমার মতো লোকেরাই বলে বেড়াচ্ছে যে তারা কোরানের প্রেমিক।
– জ্বী, যদিও জ্ঞানের প্রেমিক নয়।
– হ্যাঁ, আর এ কারণে আজ আমরা ধর্ম আল্লাহ ঈশ্বর গড কোরান বেদ কোনো কিছুর মধ্যেই প্রবেশ করব না। আমি আল্লাহর সাথে ঠাট্টা করাকে ভয় পাই। তার চেয়ে আমার আমি নিয়ে আমি একাই যা জানি তা বলতে চাই। তার আয়নায় তুমি যদি তোমার আমিকেও দেখতে পাও তাহলে তা হবে তোমার নিজস্ব পাওয়া। গুরুদক্ষিণা দিতে হবে না।
(চলবে)

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১