বাঙালি বীরের জাতি : করোনা পোকা বাংলাদেশে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ

বড় করুন

ছোট করুন

করোনা পোকা বাংলাদেশে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। কিছু কারণ বিশ্লেষণ করছি :

দুঃখ-দুর্দশা অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধিতে জর্জরিত বাঙালি জাতির আর কিছু না থাক, মানবতা বলে যে জিনিসটা মানুষের থাকা উচিত, তা রয়েছে, এবং সেই তুলনায় অন্য কোনো উন্নত সমাজেও এতটা মানবতা কোন জাতি অন্তরে ধারণ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। আমরা এখনো অন্যের দুঃখে দুঃখী এবং অন্যের সুখে সুখী হয়ে থাকি।

আল্লাহ বলেছেন যে তিনি যদি মানুষের এক দলের বিরুদ্ধে আরেক দলকে দাঁড় করিয়ে না দিতেন তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত উপাসনালয়। অর্থাৎ তখন কোন কিছুই আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পেত না। মানুষের এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে তখনই দাঁড়ায় যখন সত্যের প্রয়োজনে বা সত্যের চেতনায় বিশেষ উপলব্ধি দ্বারা তাড়িত হয়ে প্রতিবাদের প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর কোথাও কোনো অঘটন ঘটছে দেখলে বাঙালি জাতি কিছু করতে পারুক আর না পারুক সাধ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ করে জনমত গড়ে তোলে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। কিন্তু উন্নত দেশের সরকারপ্রধানরা যখন শত বছর ধরে একটানা বিভিন্ন জাতির উপর নির্যাতন নিষ্পেষণ চালিয়ে যায় তখন সেই সব দেশের জনগণ তাদের নিজ নিজ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কি না সন্দেহ। বরং তারা আরাম-আয়েশে আনন্দে দিন এবং রাত পার করে এবং নিজেদেরকে সুখী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকে। তাদের জনমতের উপর প্রতিষ্ঠিত সরকার পৃথিবীতে কোথায় কী বিপর্যয় সৃষ্টি করছে সে ব্যাপারে তারা নিজেরা কোনো খবর রাখে না।

আল্লাহ ধর্ম হিসেবে আমাদেরকে তার স্বভাব দান করেছেন। তার স্বভাব আমরা ধারণ করেছি বলেই আমরা তার প্রতিনিধি। এবং এই স্বভাবটাই হলো চিরন্তন ধর্ম, যা তিনি সূরা রুম এর 30 নাম্বার আয়াতে স্পষ্টভাবে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।

অভাব-অনটন পরিবেশ পরিস্থিতির প্রভাবে যতোটুকু বিচ্যুতি ঘটার কথা, বাঙালির মধ্যে তার পুরোটুকু দেখা যায় না। বরং বাঙ্গালী ধৈর্যশীল জাতি। যেটুকু দুঃখ-দুর্দশায় আমরা এখানে বেড়ে উঠি এবং জীবন যাপন করি এবং তার মধ্যেও সামাজিকভাবে পরস্পরের কাছে আসি, সেটুকু দুঃখ-দুর্দশায় যদি উন্নত বিশ্বের জনগণকে দেয়া হতো তাহলে হয়তো তারা অনেকেই একজনের মাংস আর একজন ছিড়ে খেত।

আমরা আল্লাহর স্বভাব ধারণ করছি বলে আমাদের মধ্যে দয়া-দাক্ষিণ্য স্নেহ-মমতা ভদ্রতা ইত্যাদি থাকার কথা। এবং সেই বিচারে বাঙালি জাতি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জাতি, তাতে কোনই সন্দেহ নেই।

নিঃসন্দেহে আমরা বীরের জাতি। আমাদের নেতৃত্তের মধ্যেও তার প্রমাণ রয়ে গেছে। যেমন, ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সামাজিক – বিভিন্ন বিচারে যে অভিমত দেয়া হোক না কেন, সব কিছু উপেক্ষা করে একটি কথা আমরা সহজেই বলতে পারি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুকে গুলি নিয়েছিলেন। তিনি পিঠে গুলি নেন নি। অর্থাৎ তিনি বীর ছিলেন। এবং তার মনোভাব ছিল আত্মদানের।

কিছুকাল আগে নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গাদেরকে আমরাই স্থান দিয়েছি এবং তার বিনিময়ে আমরা অবশ্যই আল্লাহর কাছ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার আশা রাখি।

ধর্ম পৃথিবীর অনেক সমাজেই পালন করা হয়। তবে বাঙালির ধর্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রে অহংকার বিহীন। কারণ বাঙালি জাতি একটি উদার জাতি। এখানকার জনগণের ধর্মবোধের মধ্যে বিশেষ কোন দল বা গোষ্ঠীর অহংকার দুষ্ট প্রভাব নেই। এখানে অজ্ঞতার হিংসা বৃত্তি থাকলেও জ্ঞানের অহংকার নেই, কারণ অধিকাংশ মানুষ সরল সোজা সাধারণ মানুষ।

অনেকে ভুল ধারণায় আক্রান্ত হয়ে এই জাতীয় অভিমত দিয়ে থাকেন যে এই বাংলার মাটিতে অনেক আল্লাহর বন্ধু এবং গোলামের কবর রয়েছে, আর এ কারণেই আমরা বিভিন্ন সময় রক্ষা পাই। সেই বিচারে কিন্তু ইরাকের মাটিতেই আল্লাহর বন্ধুদের কবর বেশি। তাহলে আজ ইরাকের কেন এই অবস্থা? মৃত ব্যক্তি থেকে আমরা শিক্ষা এবং তার দোয়া গ্রহণ করেছি। কিন্তু তার কবরের উপস্থিতি আমাদেরকে আর কী বা দিতে পারে? সুতরাং এই জাতীয় ব্যাখ্যা ঈমানের সাথে যায় না।

আমাদের কী ছিল তা দিয়ে আমাদের বর্তমানের সুরক্ষা নির্ধারিত হয় না। বরং আমাদের বর্তমানের সুরক্ষা নির্ধারিত হয় আমাদের কী আছে তা দিয়ে।

একমাত্র বিবেকবান মানুষই প্রতিবাদমুখর হতে পারেন। পৃথিবীর উন্নত দেশের জনগণ যেন ঘুমিয়ে আছেন। সারা পৃথিবীতে যা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে কি তাদের কোন সক্রিয় প্রতিবাদ কখনো ছিল?

অনেকেই ভাবতে পারেন – রোগব্যাধির ব্যাখ্যা ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে কেন দেয়া হচ্ছে? কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমি একটু সংশোধন যোগ করতে চাই : আমরা ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুই বলিনি। আমরা বলেছি মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে।

প্রকৃতি আয়নার মতো। এখানে আমরা যে ঘটনার সৃষ্টি করবো, তার বিপরীত দৃশ্যও একদিন আমাদেরকে দেখতে হবে।

সুতরাং সময় এসেছে বিবেক খাটানোর, তওবা করার, নিজের বা নিজেদের অতীত নিয়ে চিন্তা করার, এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার।

একজন রাষ্ট্রনায়ক যদি কোন বড় ধরনের অপরাধের বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবেও দুঃখ প্রকাশ করেন, তাও কিন্তু অনেক বড় কিছু। আল্লাহর কাছে রাষ্ট্রনায়কের দুই হাতের মূল্য সম্পূর্ণ আলাদা। রাষ্ট্রনায়ক যদি তার যাবতীয় জনগণকে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাহলে আল্লাহ তা কবুল না করেই পারেন না।

আপনি যে ধর্মের অনুসারী হোন না কেন, আপনি যদি একত্ববাদে বিশ্বাসী থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার আল্লাহ রয়েছেন। আপনার হাত পাতার জায়গা রয়েছে।

অতঃপর তাদের কাছে যখন আমার আযাব আসল, তখন তারা কেন কাকুতি-মিনতি করল না? বস্তুত তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তাদের কাজকে তাদের কাছে সুন্দর করে উপস্থাপন করেছিল। ( সূরা আনআম, আয়াত 43 )

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

নারীর প্রকৃতি

আরও পড়ুন