করোনাভাইরাসঃ কিছু কথা

বড় করুন

ছোট করুন

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন হয়ে যারা “ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন” টাইপের শ্লোগান দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশে আমার কিছু প্রশ্ন।

আপনাদের কি ধারণা, বাংলাদেশের মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় না? অবশ্যই পায়। কিন্তু কেন তারা রাস্তায়?

আপনারা যারা ইউরোপ-আমেরিকার ভয় দেখিয়ে বাঙ্গালীদের ঘরে থাকার তাগিদ দিচ্ছেন, তাদেরকে বলছি। ইউরোপ-আমেরিকা তাদের নাগরিকদের জন্য যে যে সুবিধা দিচ্ছে, যে বাজেট করছে, তা কি এদেশের নাগরিকরা পাচ্ছে? তাহলে কেন শুধু শুধু আমেরিকার দোহাই দিচ্ছেন? এদেশের মানুষের জন্য আগে ঘরে বসে নিরাপদ খাদ্যের ব্যবস্থা করেন, নিরাপদ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কেউ রাস্তায় নামবে না। আমেরিকা তাদের ৩৩ কোটি নাগরিকের জন্য ২ ট্রিলিয়ন ডলার বাজেট করেছে, বাংলাদেশি টাকায় একটু হিসাবটা ক’রে দেখুন। যেখানে আমেরিকানদের নিজেদেরই অন্তত ভাতের অভাব নেই।

বাংলাদেশের জনগনের বড় একটা শ্রেণী দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। আর যাদেরকে আমরা মধ্যবিত্ত বলি, তারাও মূলত দরিদ্র। ভদ্রতার খাতিরে মধ্যবিত্ত বলি। সর্বসাকুল্যে দারিদ্রপীড়িত এদেশের মানুষের নিরাপদ বেঁচে থাকা নিশ্চিত না ক’রে ঘরে থাকুন টাইপের কথা বলা বন্ধ করুন। এদেশে যারা ভাড়া বাসায় থাকেন, তাদের বেশিরভাগেরই ১ মাসের অগ্রিম বাসা ভাড়া জমা থাকে না। খাদ্য জুটবে কিভাবে? পেটে ক্ষুধা থাকলে ভাইরাস কেন, মৃত্যু কেন, বন্দুকের নল দিয়েও ঘরে ঢুকাতে পারবেন না। মনে রাখবেন।

বাহিরে মাস্ক পরার নামে আমাদের যে প্রচেষ্টা চলছে…. তা চলুক। কিন্তু ঘরের ভেতর যারা মুখ লুকাতে মাস্ক পরে আছে, তাদের কথা ভাবুন। মাস্কের পেছনের অভুক্ত চেহারা একদিন রাক্ষুসে রূপ ধারণ করতে পারে। সতর্ক হউন, সময় থাকতে।

রাস্তায় দু’একজন মানুষের ঘোরাঘোরিতে ভালোই লাঠি চালানো যায়, কিন্তু গণমানুষের ঘরে থাকার সম্বল যখন শেষ হবে, মানুষ তখন পেটের দায়ে কি ভাইরাস, কি বন্দুক আর কি লাঠিসোটা সব একসাথে গিলে খাবে। তখন বুঝবেন কোনটা আমেরিকা আর কোনটা বাংলাদেশ।

সুশীলদের বলছি, আপনারা “ঘরে থাকুন নিরাপদ থাকুন” টাইপের কথা বন্ধ  ক’রে দেশের প্রকৃত ভবিষ্যত চিন্তা করে রাষ্ট্র পরিচালকদের সতর্ক করুন। নাগরিকদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করুন, চিকিৎসা নিশ্চিত করুন। তা না হলে আপনারা ঘরে থেকেও শান্তি পাবেন না। আর জানেনই তো বিদেশ পাড়ি দেয়ার রাস্তা আপাতত বন্ধ।

কিছু ফোন নাম্বার দিয়ে “খাদ্যের জন্য, চিকিৎসার জন্য ফোন করুন” টাইপের সেবা বাতিল করুন। পারলে ঘরে ঘরে নিরব সেবা পৌঁছান। ফোন ক’রে এদেশে সার্ভিস কেমন পাওয়া যায়, তা সবাই ভালো ক’রে জানে। এখন হতদরিদ্ররা রাস্তায়, কয়েকদিন পর কথিত মধ্যবিত্তরাও সামিল হবে। ভাইরাস মুক্ত করার আগে পেটের ক্ষুধা মুক্ত করুন। তা না হলে, গণবিষ্ফোরন সবকিছুকে গ্রাস করবে। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভীক্ষ প্রত্যক্ষ করবে এ জাতি।

একটা শ্রেণীর মানুষের হাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে, যারা এদেশের যাবতীয় উৎপাদন – মজুদ গ্রাস করছে। এদেশের বাড়িওয়ালাদের দিনে এনে দিনে খেতে হয়না। আপনাদের যাবতীয় প্রচেষ্টায় তাদেরকে সহনশীল হওয়ার তাগিদ দিন। প্রয়োজনে বন্দুদের নল, লাঠিসোটা সেখানে ব্যবহার করুন… অভুক্ত মানুষের পেটে নয়।

সম্প্রতি সরকার বাজেট ঘোষনা করেছে, চাই বাজেটের সব অর্থ বন্ধুকের নল ও লাঠিসোটায় ব্যয় না ক’রে তা দ্বারা সরকারের সকল বাহিনীর দু’টি হাত সামান্য কিছু বেঁচে থাকার প্রয়াস নিয়ে এদেশের প্রতিটি দরজায় কড়া নাড়ুক। মানুষ বেঁচে থাকতে রাস্তায় আসবে না।

সকলের সহনশীলতাই পারে সকলকে একসাথে ভালোভাবে বাঁচাতে।

বিনয়ের সহিত: সম্পাদক, আর্টিকেলস।

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ভালোবাসার শানে নুজুল

বই

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১