আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ৩
সময়: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ণ
লেখক: এস.এম. জাকির হুসাইন।
উৎস: ফেসবুক ওয়াল থেকে
টপিক: অলৌকিকের লৌকিকতা, আধ্যাত্মিক জীবন, আবিস্কার, ধর্ম ও ইসলাম, বিশেষজ্ঞের মতামত, মহাজ্ঞান, শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য
ট্যাগ: Featured
শাকিল বলল – গুরুজী, আপনি যা বলবেন তা মনে হয় আমি কিছুটা বুঝতে পারছি। যেমন আপনি বাদ দিতে দিতে এগোতে থাকবেন। হয়তো এভাবে অনুসন্ধান করবেনঃ আমি মানে এই চোখ দুটো নয়। এই কান দুটো মানেও আমি নয়। আমার শরীরের কোনো অংগই আমার আমি নয়। ইত্যাদি।
গুরুজী বললেন – এই জাতীয় কথায় জিহবার জড়তা কাটে কিন্তু আর কোনো ফল হয় না।
– এ আপনি কী বলছেন, গুরুজী? অনেকে কিন্তু আমাকে এভাবেই ভাবতে শুরু করতে বলেছেন।
– যেখান থেকে যাত্রা করে শেষ পর্যন্ত পৌঁছানো যায় না, তাকে শুরু বলা যায় না।
– আপনার এই কথাটা গণিতের মতোই অকাট্য। কিন্তু পরে যা বলবেন তা নিয়ে দুশ্ছিন্তায় আছি, গুরুজী।
– দেখো, তুমি যদি তোমার চোখ হতেও, তাতে তোমার তুমি হয়ে ওঠার কোনো বিশেষত্ব থাকত না। কারণ সবার চোখ ই কোনো জিনিস কে একই জিনিস হিসেবে দেখে। তুমি যখন চাঁদ দেখে তাকে চাঁদ বলো তখন অন্য কেউ চাঁদ দেখে তাকে সূর্য বলে না। এভাবে ভাবলে তুমি দেখতে পেতে যে তুমি যদি তোমার কান ও হতে, তবুও তুমি হয়ে যেতে অন্য যে কারোর কানের মতো এবং ফলে তুমি আর তুমি থাকতে না বলে তুমি অন্য কাউকে তিনি বলে নিজেকে আমি বলতে না। অর্থাৎ তুমি যে তোমার চোখ নও তা সত্য হওয়া সত্ত্বেও এই উদ্ঘাটন তোমার আমিত্ব অনুসন্ধানে কোনো কাজে আসত না। কোনো কিছু গ্রহণ করার ফল যা, তা বাদ দেয়ার ফলুও যদি তাই হয়, তাহলে সেই প্রসংগেরই কোনো গুরুত্ব নেই।
– – আপনার কাছে এলে এটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আপনি এ দিকেও যেতে দেন না, ও দিকেও যেতে দেন না।
– – কী করব বলো? এ দিক ও দিক ছুটোছুটি করে তো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না।
– – গুরুজী, তাহলে আমার একটা অনুমান হচ্ছে। আমার মনে হয় মনটাই আমি। ঐ ব্যাটাকে জানতে পারলেই উদ্দেশ্য হাসিল হতো।
– – তোমার মন তোমার একটা অংগ মাত্র।
– – হায় হায়! আগেই শুনেছিলাম যে নিজের মাথা নষ্ট করতে চাইলে আপনার কাছে আসাই যথেষ্ট। গুরুজী, তাহলে কি আমি মানে আমার মন নয়? আসলে, আপনি সব কিছুই প্রথমে এলোমেলো করে দেন। তাই আমার নিজের মধ্যে যে এলোমেলো ভাবনাগুলোর উদয় হয় সেগুলোই তুলে ধরছি।
– – তোমার একটা মন আছে, কিন্তু তুমি মানে মন নও। তাছাড়া মন টা যে কী তাই তো তুমি জানো না। এক না জানার সাথে আর এক না জানার সমীকরণ ঘটিয়ে কী লাভ? গণিত কি তোমাকে এই শিখিয়েছে? দুইটা আননৌন ভেরিয়েবল দিয়ে ইকুয়েশন সাজিয়ে তা কি সল্ভ করা যায়?
– – তাহলে তো ভালোই বিপদে ফেললেন, গুরুজী?
– – আগে যে বিপদে ছিলে সেই বিপদেই আছো। একটু বেশি স্পষ্টভাবে অনুভব করছ, এই আর কি।
– – সমস্যা অস্পষ্ট বলেই তো তা এতোটা স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে।
– – আমারও তো একই কথা! বিষয়টাকে অস্পষ্ট করে কেন তুলছো? আমি তো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়া কোনো অনুমান-আন্দাজ পছন্দ করি না। আমি তো কেবল যা দেখা যায় তার আলোকেই কথা বলি।
– – ও আল্লাহ! আপনি এই বিষয়টা নিয়েও যা দেখা যায় তার আলোকে এগোতে চান? তা কি আদৌ সম্ভব, গুরুজী? আপনার আলোচনায় কি অদৃশ্য চলে আসবে না?
– – অদৃশ্যের যে প্রান্ত দৃশ্যমান তা ধরেই আমরা টান দেবো।
– – জানি না, আল্লাহ আপনাকে কী টেকনোলজি দিয়েছেন। জ্ঞানে তো আনতে পারব না, বিশ্বাস দিয়ে ধরার চেষ্টা করব।
– – তোমার অন্তরে অবিশ্বাস থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।
– – অবিশ্বাস নিয়েও এগোনো যাবে?
– – অবশ্যই যাবে। কারণ আমরা বিশ্বাস দিয়েও এগোতাম না।
– – তাহলে?
– – স্পষ্ট জ্ঞানই আমাদের একমাত্র পথ। তোমাকে যা দেখানো যায় কেবল তা নিয়েই আমি কথা বলব।
(চলবে)
উৎস: https://www.facebook.com/groups/1296713383768951