ইবলীসের প্রতি খোলা চিঠি

সময়: ০৫ মার্চ ২০২৪, ৫:০৭ অপরাহ্ণ

লেখক:

উৎস: ফেসবুক ওয়াল থেকে

টপিক: , , , , ,

ট্যাগ: 

লেখক প্রোফাইল 

বড় করুন

ছোট করুন

সব সময়ে ভালো কিছু করার চিন্তা করার অভ্যাসকে অন্তরের জন্য শ্রেষ্ঠ ব্যায়াম বলে গণ্য করেছি । সন্দেহ নেই যে এর কারণে ‘সরল’ মনে বেশি বেশি কষ্ট পাওয়ার অনেক কারণ ঘটে। তবে এর মাধ্যমে ভিতরে বাইরে এমন কিছু জয় করা যায় যা রাজার ক্ষমতায়ও অর্জন করা যায় না।
যে আমাকে সবচেয়ে অপছন্দ করেছে মনের মধ্যে একটা বিকল্প রাজ্য তৈরি করে সেখানে তাকেও ভালোবাসার কল্পনা করেছি। তাতে এতটাই লাভ হয়েছে যা কল্পনাতীত। নিজের সংকীর্ণতাকে নিজের দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অসহায়ের মতো পড়ে থাকতে দেখেছি। দয়া এতটাই উতলে পড়েছে যে নিজের সেই সংকীর্ণতাকেই করুণা করে আনন্দ লাভ করেছি। ভালো দিয়ে মন্দের প্রতিদান দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছি।
মৃত্যুকে ভয় পেতে পেতে এতোটাই তার কাছে চলে এসেছি যে সে তার ভয়ের ঝুলিটা বাইরে রেখে অন্তরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ফলে মৃত্যুকে বন্ধু গণ্য করে তাকে নিয়ে গল্প লিখি। মৃত্যু নিয়ে এতটা মধুময় চিন্তা হয়তো অনেকেই করতে চাইবে না।
নিজের আধ্যাত্মিক উপলব্ধিকে স্রেফ সাহিত্যিবোধ হিসেবে গণ্য করতে শিখেছি। তাতে অহংকার থেকে রক্ষা পেয়েছি। সত্যের প্রতি কারও অস্বীকৃতিকে ব্যক্তিগত আঘাত হিসেবে মনে হয় নি। রক্ষা পেয়েছি অহংকার ও হিংসা থেকে।
নিজেকে বঞ্চিত করতে করতে নিজেকে এতটাই কোণঠাসা করে ফেলেছি যে নিজের ওপর মাঝে মাঝে করুণা হয়। মাঝে মাঝে ভাবি: এটা কি স্বার্থপরতা? নাহ! যে যাই বলুক, নিজেকে এভাবে ভালোভাসার মধ্যে এমন একটা স্বাদ আছে যা মৃত্যু ছাড়া আর কিছুতেই পাওয়া যাবে না। ফলে রক্ষা পেয়েছি লোভ থেকে এবং নিজেকে ভালোবাসার স্বাদও পেয়েছি।
শিশুকালে কল্পনায় নিজেকে হাত-পা বেঁধে একটা প্রান্তরে ফেলে রাখতাম এবং আসা-যাওয়ার পথচলার সময়ে নিজেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় দেখে নিজেই চোখের পানি ফেলতাম। সেই অশ্রু কল্পনার আকাশ থেকে বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিত বাস্তবের চিবুক। ভয়ে ভয়ে থাকতাম – আপন জনদের মধ্যে কেউ আবার নিজের ওপর আমার এই আচরণের ঘটনা দেখে না ফেলে। তাহলে তারা আমাকে করুণা করবে। তাতে তাদের সময় নষ্ট হবে। অথচ তাদের সন্তানাদি পিতা-মাতা আছে, যাদের জন্য তাদেরকে ভাবতে হবে। কখনও চাই নি আমার জন্য ভেবে কেউ সময় নষ্ট করুক। নিজেকে কল্পনা করেছি এমন একটা চিন্তার যন্ত্র হিসেবে যে গোটা মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করবে।
এমন অনেক রাত গেছে যখন ইবলীসের জন্য কেঁদেছি – করুণায়। বেচারা অহংকার ও ক্ষমতার দাপটে দিশেহারা। অথচ সত্যকে সে ঠিকই চিনে ফেলেছিল। শুধু এটুকু বুঝতে পারে নি যে মানব সৃষ্টির পর সত্য তাঁর কান্দ্রীয় জায়গা বদল করেছেন। বই-পুস্তকে পড়েছি যে ইবলীস কখনই মানব সন্তানের ওপর দয়া দেখাবে না, তাকে যতই দয়া দেখানো হোক না কেন। অবশ্য আমি তো তার কাছ থেকে দয়া আশা করি না। তবে ভদ্রতা আশা করতে পারি। একদিন দেখাও হলো ইবলীসের সাথে। সামনে হুমায়ুন কবির তপু এবং রিজভী রনি বসে আছে। হঠাৎ দেখলাম ইবলীস আমার বাম পাশ থেকে আমার দেহের মধ্যে ঢুকে আমার সাথে পুরোপুরি মিলে গিয়ে ডান দিক থেকে বের হয়ে গেল। যাবার সময়ে একটা কথা বলে গেল, যার এক অংশ ছিল – আমি চলে যাচ্ছি।
তিন দিন ধরে আমরা তিনজন ঘটনাটা এবং ইবলীসের কথার অর্থ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। তৃতীয় দিন শেষে রাতে দুর্ঘটনায় বুকের বাম পাশের তিনটা হাড় ভেংগে গেল। সবাই মিলে একাধিক হাসপাতালে ছুটল আমাকে নিয়ে। মৃত্যু হতে পারে ভেবেও ওদেরকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে এ সব জিনিস জগতের কাজকর্ম না সেরে মরার জন্য জন্মায়নি। আল্লাহ আমাকে সে যাত্রায় রক্ষা করে আমার আবেগের কথাটাকে সম্মান দিয়ে এই অধমের মুখ রক্ষা করেছেন।
এর আগে শিশুকালেও একবার দেখেছিলাম তাকে। একটা জন্তু আকারে। অন্তর তাকে চিনতে ভুল করে নি।
অনেক লোকের মধ্যেও একা বসে থাকার অভ্যাসটা গড়ে তুলেছি। ফলে অন্যদেরকে কখনও কখনও দেখেছি নিজেরই মধ্যে। অনুভব করতে পেরেছি যে কেউই দূরের নয়, কিছুই হারিয়ে যায় না।
ইবলীস কে দূরের কোনো শক্তি মনে করি না, যদিও জীব হিসেবে সে আলাদা, প্রজাতি হিসেবেও।
হে ইবলীস! তোমার স্বভাবকে ঘৃণা করি আমি। তুমি আমার প্রকাশ্য শত্রু। যেহেতু তুমি বধ্য নও, সেহেতু তোমাকে আমি জয় করব। কারারুদ্ধ বন্দি হয়ে তোমাকে থাকতে হবে আমার সাথে। কারণ তুমি দূরের কেউ নও। আমার সৌভাগ্য এটাই যে তুমি বধ্য নও। তুমি যদি বধ্য হতে তাহলে অনেকেই চাইত তোমাকে বধ করে তোমার জায়গাটা দখল করতে। মানুষকে জয় করা কঠিন কাজ। বরং আমি তোমাকে জয় করতে চাই। আমার সান্নিধ্যে তুমি নিজের শক্তির ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়বে।

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১