চিকিৎসায় আধ্যাত্মিক প্রযুক্তি এবং ভাবনায় বিপ্লব – ১

বড় করুন

ছোট করুন

চিকিৎসায় আধ্যাত্মিক প্রযুক্তি এবং ভাবনায় বিপ্লব

আমরা কল্পনা থেকে শুরু করব এবং অবশেষে বাস্তবতাকেই আবিষ্কার করব।

কল্পনা করুন একটা মূর্তি – মানে একটা নিষ্প্রাণ দেহ। মাটি দিয়েই গড়া, কিন্তু কোনো মানুষ তা গড়ে নি।
একটা মানব দেহ।
এবং কল্পনা করুন যে আপনি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক জন দেহবিশারদ বা বিজ্ঞানী। আপনার কাছে তথ্য এলো যে সেই দেহটার মাংসের ভিতরে একটা ফোড়া রয়েছে। আপনি অস্ত্র দিয়ে তা কেটে ফেলতে পারবেন কিন্তু সে অনুমতি আপনার নেই। তাছাড়া একটা ফোড়া কেটে ফেললেও যে কারণে তা সৃষ্ট হয়েছে তা নিরাময় করা সম্ভব না হলে এরকম ফোড়া আরও হতে পারে বলে একেবারে শেষ চেষ্টার ক্ষেত্র ছাড়া কেটে ফেলায় কোনো সমাধান নেই বলে আপনি নিজেই নির্ধারণ করলেন।
ঝাড়ফুঁক দিয়ে কাজ হলে তো বেঁচেই যেতেন কিন্তু আপনি এক জন বিজ্ঞানী, জাদুকর নন। তাই আপনাকে বস্তু সম্পর্কে আপনার জ্ঞান এবং বস্তুর গুণ ব্যবহার করেই কাজ করতে হবে। কারণ এই জ্ঞান ই তো বিজ্ঞান। আর এই জ্ঞান প্রয়োগের উপায়টাও আপনাকেই উদ্ভাবন করতে হবে। বিজ্ঞানের জ্ঞানের এই প্রয়োগ ই তো প্রযুক্তি।
দেহবিশারদ হিসেবে আপনি জানেন যে দেহ যে খাদ্য গ্রহণ করে তার পুষ্টি ই দেহের বিভিন্ন স্তর গঠন করে। যেমন প্রথমে তা খাদ্যরস বা কাইল (Chyle), তা থেকে রক্ত, তা থেকে মেদ বা চর্বি, তা থেকে মাংস বা পেশি, তা থেকে অস্থি, তা থেকে মজ্জা, এবং তা থেকে শুক্র তৈরি হয়। আপনি এভাবে ধরে নিতে পছন্দ করেন যে দেহের মধ্যকার একটা সিস্টেম খাদ্যকে নির্যাস বানিয়ে তা থেকে ধাপে ধাপে এগুলো তৈরি করছে। অর্থাৎ তার ই একটা নির্দিষ্ট অংশ এক একটা স্তরে জমা হচ্ছে।
আপনি এক বার একটা মেশিন উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেছিলেন প্রোটিন বা আমিষ বানাবার জন্য। আপনার পরিকল্পনা ছিল এমন যে আপনি তার একটা জায়গায় খাদ্য-সামগ্রী বা গাছপালা ঢেলে দেবেন এবং অন্য একটা জায়গা থেকে তাজা প্রোটিন বেরিয়ে আসবে। আপনি তা প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করবেন। মানুষের আমিষের প্রয়োজন মিটবে।
কিন্তু কিছুকাল গবেষণা করার পর আপনি দেখলেন যে আপনি অযথা সময় নষ্ট করছেন, কারণ এই মেশিন তো পৃথিবীতে রয়েছে – কোটি কোটি। গরু ঘাস কে প্রোটিনে রূপান্তরিত করে। মুরগি সাধারণ খাদ্যকণাকে প্রোটিনে রূপান্তরিত করে। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং ইত্যাদি।
আপনি এখন যে দেহটাকে নিয়ে গবেষণা করছেন তাতেও একই প্রক্রিয়া চলতে পারে। দেহটা এই মুহূর্তে নিষ্প্রাণ হলেও তা সংরক্ষিত বলে তার রূপরেখা আপনার কাছে দৃশ্যমান। তাই আপনি ভাবছেন – কিভাবে এর মধ্যে গতি সৃষ্টি হয়? প্রাণ কাকে বলে ত আমি জানি না। কিন্তু এই দেহে প্রাণ সঞ্চারিত হলে তাতে খাদ্যকণার রস এর প্রবাহ কিভাবে রক্ত মেদ মাংস অস্থি মজ্জা হয়ে শুক্র পর্যন্ত পৌছায়? প্রক্রিয়াটা ভালোভাবে না বুঝতে পারলে তো ফোড়াটা কেন এবং কিভাবে তৈরি হলো এবং কিভাবে তা অপসারণ করা যাবে সে বিষয়ে আপনার চিন্তাই এগোবে না। চিন্তা এগোতে হলেও তো একটা পথ লাগে। তথ্যের পথ। আর কেবল সেই পথে চলেই তা গন্তব্যে পৌছায়। জ্ঞানের গন্তব্যে। আর সেই গন্তব্যের শিখরে দাঁড়িয়েই জ্ঞানকে কর্মে রূপান্তরিত করার উপায় বের করা যায় – যাকে বলে প্রযুক্তি।
মাঝে মাঝে কল্পনা করছেন – যদি কোনো এক জাদুকরি কায়দায় দেহের মধ্যে একটা তরলের বন্যা সৃষ্টি করা যেত তাহলে ফোড়াটাকে ধুয়ে বিলীন করে দেয়া যেত। কিন্তু আপনি তো আবার জাদুকরের কল্পনা পছন্দ করলেও দিনের শেষে একজন বিজ্ঞানী। কল্পনা আপনার চিন্তাকে শুরু করে দিতে পারে কিন্তু এগিয়ে নিতে পারে না, কারণ চিন্তা এগিয়ে যায় চিন্তার নিয়মে অর্থাৎ যুক্তি ও তথ্যের হাত ধরে।
আবার ভাবছেন – দেহের ঐ জায়গায় যদি এক খণ্ড অদৃশ্য আগুন বা তাপের গোলকার বেলুন পাঠিয়ে দেয়া যেত তাহলে ওটাকে গলিয়ে পুঁজ বানিয়ে রক্তের মাধ্যমে তা নিষ্কাশন করে প্রস্রাবের সাথে বাইরে বের করে দেয়া যেত। কিন্তু এটাও তো জাদুকরের কল্পনা হয়ে থাকবে, যতক্ষণ বিজ্ঞানের স্টেজে জাদুটা দেখাতে না পারছেন।
আবার ভাবছেন – ফোড়াটা এখনও বড় হয় নি, সুতরাং ওখানে কোনো এক কায়দায় এক খণ্ড অদৃশ্য বরফ পাঠিয়ে দিয়ে ওটাকে যদি আরও জমিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যেত। যা হোক, বাইরের জগত আপনার চিন্তার ফল দেখতে চায়, কল্পনার রঙ নয়।
একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এক নাগাড়ে গঠনমুলক চিন্তা চালিয়ে যেতে থাকলে সেই চিন্তার স্নোবলিং হয়, অর্থাৎ স্নো যেমন ধীরে ধীরে বড় গোলকে রূপান্তরিত হতে থাকে তেমনি তা ভাব তথ্য ও অভিজ্ঞতার ম্যাটেরিয়ালে সমৃদ্ধ হয়ে নিজস্ব দেহ গঠন করতে থাকে। আর এই পর্যায়ে ঘুমের মধ্যে সেই চিন্তা চলতে থাকে। ফলে এক ঘুমের মধ্যে আপনি দেখলেন যে বাইরে থেকে তিনটা ট্রান্সপারেন্ট দেহ সেই দেহের মধ্যে একে একে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আপনার মাথার মধ্যকার সৃজনী বাতিটা জ্বলে উঠল। সুতরাং এখন ঘুম ভাংতেই হবে।
আপনার কল্পনা এখন দৃশ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। আপনি আপনার কল্পনাকে আপনার জ্ঞানের সাথে মিলিয়ে একটা নতুন চিত্র পেয়ে গেলেন। এই চিত্র অংকণের প্রক্রিয়াকে আপনি বলতে চান আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা উপলব্ধি।
আপনি এখন ধরে নিতে চান যে দেহের মধ্যে রয়েছে আরও তিনটা দেহ। তাদের একটা শুধু বায়ুর প্রবাহ। একটা আগুনের প্রবাহ। বাকিটা এই আগুনের উলটো পিঠ।
বায়ুর দেহ টাতে বাইরের বায়ু প্রবেশ করে তা থেকে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে।
আগুনের দেহটাতে বাইরের আগুন যেমন প্রবেশ করছে তেমনি দেহের ভিতরের কারখানায় উৎপন্নতাগুন ও প্রবেশ করে তা বেরিয়ে যাচ্ছে।
আগুনের দেহের তাপের ভারসাম্য রক্ষার জন্য তার অনুপূরক দেহ টা শৈত্য প্রবাহ সৃষ্টি করছে। আপনি যদি এই দেহভ্যন্তরের দেহগুলোকে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি পেয়ে যান তাহলে আপনি দেহের ইঞ্জিনিয়ারিং টাই রপ্ত করে ফেলতে পারবেন।
আপনি দেখলেন যে বায়ুর দেহটাতে আপনি নিম্নগামী বা ঊর্ধগামী বা প্রচ্ছন্ন বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করতে বা তা সৃষ্ট হলে প্রশমিত করতে পারেন। এমন দ্রব্য আপনার জানা আছে যা শুধু এই দেহের বিভিন্ন পর্যায়ের ওপর প্রভাব ফেলে।
এভাবে আপনি ইচ্ছে মতো আগুনের দেহের ওপর আঞ্চলিক বা সার্বিক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেন।
এভাবে আপনি প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির পথ পেয়ে গেলেন। যেখানে ফোড়াটা হয়েছে সেখানকার বায়ুর স্রোতের গতি বাড়িয়ে দিয়ে আপনি মাংসের জমিনটা ধুয়ে বিষমুক্ত করতে চান। একই সাথে আপনি শীতল তরলের দেহটার ওপর প্রভাব ফেলে ফোড়ার মধ্যে জমে যাওয়া তরল কে সরিয়ে দিতে চান।
প্রকৃতপক্ষে বায়ুর দেহটার প্রবাহ-কাজে বাধা পড়ার কারণে এবং আগুনের দেহটার ঐ অঞ্চল বেশি ঘনীভূত হওয়ার কারণেই ফোড়াটা তৈরি হয়েছিল। আপনি এখন বিপরীত একটা প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে দেহের আগের অবস্থায় ফেরত যেতে চান।
এই হলো আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি। মেরামতী পদ্ধতি। কিন্তু আপনি আরও একটা উপায় অবলম্বন করতে চান। পরিবর্তনশীল দেহের মধ্যেও তার আদি অক্ষত তথা স্বাস্থ্যবান অবস্থার একটা প্রতিলিপি বা নকল সংরক্ষিত রয়েছে। এন্টি-এজিং তথা রসায়ন শাস্ত্রের পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি সেই সুস্থ দেহের মেমোরিটাও জাগ্রত করতে চান। ফলে একই সাথে দুটো দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি দ্রুত সেই ফোড়াটাকে বিলীন করে ফেলতে চান। দেহের সুস্থ্য রূপের মেমোরিটা জাগ্রত করতে পারলে, আপনি জানেন, ফোড়াটা সেরে যাওয়ার পর আর গজাবে না।
আপনি এখন আবিষ্কার করতে পেরেছেন যে প্রাণ মানে যাই হোক না কেন, দেহে প্রাণ সঞ্চারিত হলে তার মধ্যে এই অদৃশ্য তিনটা দেহ ক্রিয়াশীল হয়। আপনি রোগ সৃষ্ট হওয়ার জন্য যত বড় কারণ ই ঘটান না কেন, সেই কারণ এই তিনটা দেহের অন্তত একটা যদি প্রভাবিত না করতে পারে তাহলে আপনার সেই আচরণে নিয়ম-ভংগ কোনো রোগ সৃষ্টির কারণ হবে না।
Source: ShefaKanon

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১