সময়ের অজানা রহস্যঃ বিজ্ঞানের ওপারে – ২

বড় করুন

ছোট করুন

প্রথমে সাধারণ কিছু যুক্তি তুলে ধরা যাক। এমনটি নয় যে এই যুক্তিগুলি সব আমার নিজস্ব। যে কোনো বিবেকবান এবং জ্ঞানী ব্যক্তি এই যুক্তিগুলি কিছু কিছু অনায়াসে তুলে ধরতে পারবেন।

আল্লাহর রসূল (স) যদি সশরীরে আরশে না যেতেন তাহলে তাঁর জন্য বাহনের প্রয়োজন হতো না। কারো মৃত্যুর পর তার আত্মাকে ফেরেশতাগণ পরস্পর দায়িত্ব ভাগাভাগি করে যেভাবে নিয়ে যায়, তাঁকে সেইভাবে নিয়ে যাওয়া হতো। কিংবা আকাশের পথ দেখিয়ে দিয়ে তাঁকেই সেই পথে যেতে বলা হতো।

তিনি যদি সশরীরে ভ্রমণ না করতেন তাহলে তাঁর সামনে পরীক্ষামূলকভাবে দুধ মধু মদ ইত্যাদি খাবার উপস্থাপনের কোনো অর্থ থাকত না।

তিনি যদি সশরীরে ভ্রমণ না করতেন তাহলে তা বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার প্রসঙ্গটাই আসতো না। কারণ একজন নবী বা রাসূল কে অদৃশ্য থেকে বাণী জ্ঞান এবং আরো অনেক কিছু দেয়া যদি সম্ভব হয়, তাহলে সেই পবিত্র ব্যক্তির আত্মার পক্ষে অসম্ভাব্য পথেও ভ্রমণ করা অবিশ্বাস্য কিছু নয়। দেহের প্রসঙ্গ বাদ দিলে বাকি থাকে রুহ বা অত্মা। সেই আত্মার ক্ষেত্রে অন্তত ভ্রমণের বিষয়টি মেনে নেয়া সবার জন্যই সহজ। তাইতো দেখা যায় যে, যারা সশরীরে ভ্রমণ মেনে নিতে পারছেন না, তারাও আত্মিক ভ্রমণকে সহজে মেনে নিচ্ছেন, এবং অস্বীকার করছেন না। অত্মা যে কী সে সম্পর্কে কারো আদৌ কোনো ধারণা না-থাকা সত্ত্বেও, এই বিষয়টি সবাই সহজে গ্রহণ করে ফেলছেন যে, আত্মা দ্রুতগামী হতে পারে এবং সূক্ষ্মগামী হতে পারে। আত্মা সম্পর্কে কোনো কিছু না জেনেও কিভাবে তার এই অবিশ্বাস্য শক্তিতে মানুষ বিশ্বাস করে? কারণ আত্মার সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান না থাকলেও কিছু ধারণা রয়েছে। সেই ধারণার আশ্রয়ে শরীরের ক্ষেত্রে যা অবিশ্বাস্য, আত্মার ক্ষেত্রে তাকে বিশ্বাস্য বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু যেহেতু এই ধারণা জ্ঞানভিত্তিক নয়, সেহেতু এটিও এক ধরনের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসেই যখন ফিরে আসতে হলো, তখন তো আর যুক্তি জিততে পারল না।

আল্লাহ নিজেই বলেছেন যে মানুষকে আত্মা বা রুহ এর ব্যাপারে খুব কম ই জ্ঞান দেয়া হয়েছে। যে আল্লাহ নিজেই বলছেন যে আকাশ ও পৃথিবীর এবং এই দুইয়ের মাঝামাঝি যা কিছু আছে সব তিনি মানুষের অধীন করে দিয়েছেন, সেই আল্লাহই বলছেন যে মানুষকে রুহ সম্পর্কে খুব কম জ্ঞান দেয়া হয়েছে। বিষয়টি চিন্তার উদ্রেক করে।

যা হোক, এ ব্যাপারে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ এ ব্যাপারে আমার নিজের জ্ঞানও খুবই সীমিত। তবে একটি কথা মনে রাখা জরুরিঃ বাহ্যিক জগৎ এর যে চিত্র আমরা মস্তিষ্কের মধ্যে গঠন করি তাকে জ্ঞান বলা হয়। ভিতরকার চিত্র এই জাতীয় তথ্য-ভিত্তিক জ্ঞান দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই বলা হয়েছে যে আত্মার ব্যাপারে মানুষকে খুব কম জ্ঞান দেয়া হয়েছে। যা মানুষকে পুরোটাই দিয়ে দেয়া হয়েছে তার তথ্য দেয়া হয়েছে সামান্যই! জ্ঞানের মাধ্যমে আত্মার চরিত্র যদি প্রকাশ করা যেত, তাহলে পৃথিবীর জাগতিক বিজ্ঞানীগণ সবচেয়ে বড় আত্মার বিজ্ঞানী বলে বিবেচিত হতেন। এবং বিশ্বাস এর পথ অবলম্বন না করে কেবল অহংকারের পথ ধরে আত্মার রহস্য তারা জেনে ফেলতেন। কিন্তু এই দৃষ্টিকোণ থেকে অত্মার তথ্য জানার কোনো উপায় আল্লাহ রাখেননি। আত্মার সাথে মনের দূরত্ব দূর করার মাধ্যমে আত্মার সমুদ্রে ডুবে যাওয়া যায়, জ্ঞানের মাধ্যমে তা অর্জন করা যায় না। তা যদি যেত, তাহলে পৃথিবীর কাউকেই সত্যের পথ অবলম্বন করে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে হতো না।

যাহোক, আমরা কান্ডজ্ঞান এর আয়নায় বিষয়টির চিত্র দেখার চেষ্টা করছি। আল্লাহর রসূল (স) যদি সশরীরে আরশে না যেতেন তাহলে তাঁর হৃদযন্ত্র পরিষ্কার করার প্রয়োজন হতো না। একাধিকবার তার হৃদপিণ্ডকে সূক্ষ্ম আলো কে ধারণের উপযোগী করার জন্য তাঁর ওপর দৈব অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কোরআনের ছোট্ট একটি সূরাতে এই বিষয়ের প্রতি উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ প্রশ্নের মাধ্যমে তাঁর রাসূলের জীবনের বিভিন্ন আঙ্গিকে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল সেগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করতে গিয়ে তাঁর বক্ষ উন্মোচনের কথাটি উল্লেখ করেছেন – আমি কি তোমার বক্ষ উন্মোচন/সম্প্রসারিত করি নি?

আলোর গতিতে বা তার চেয়েও দ্রুত ভ্রমণ করতে পারলে আয়ু বেড়ে যায় ছাড়া কমে না। বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এই দাবি করে। কিন্তু আল্লাহর রাসূলের আয়ু কমে গিয়েছিল। এ থেকে অনেকে বলে যে এই ভ্রমণ বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা যোগ্য নয়। কিন্তু বিষয়টি হলো, ভ্রমণের কারণে অায়ু সংক্ষিপ্ত হওয়ার প্রসঙ্গটি এখানে আসেনি। বরং তিনি দীর্ঘকাল আল্লাহর যাবতীয় নিদর্শন দেখার জন্য সেখানে অবস্থান করেছিলেন। সেই অবস্থান করার সময়টুকুর বিপরীতে তাঁর জাগতিক জীবনের আয়ু কাঁটা গিয়েছিল। তিনি যদি সশরীরে এই ভ্রমণ না করতেন তাহলে আয়ু কাটা যাওয়ার প্রসঙ্গটি অর্থপূর্ণ হতো না।

যাহোক, আমরা তো আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় তথা সময়ের রহস্যে এখনো প্রবেশ করিনি। সময় সম্পর্কে মানুষ চিরকাল ধরেই বেখেয়াল ছিল। বিজ্ঞান সময়কে স্রেফ হিসাবের বস্তু হিসেবেই চিহ্নিত করে রেখেছিল। কিন্তু তা যে বাস্তবতা এবং ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়কারী উপাদান, এই বিষয়টি বিজ্ঞানকে প্রথম দেখিয়েছেন আইনস্টাইন। তা না হলে সময় সম্পর্কে আমরা যে কথাগুলো বলব, তা বলার জায়গাই তৈরি হতো না। এমনকি বিশ্বাসীরাই কথাগুলি হেসে উড়িয়ে দিতো। সুতরাং তোমাদের মাথা দুটোকে একটু ঘুরিয়ে দিই।

বুড্ডা প্রশ্ন করল – গুরুজী, আপনার কথা শুনে বিজ্ঞানীগণ আবার বিরক্ত হয়ে যাবেন না তো?

– বিজ্ঞানীগণ যেহেতু প্রত্যক্ষভাবে তথ্যের ভিত্তিতে জ্ঞানী, সেহেতু তারাই এই কথার মর্ম বেশি করে উপলব্ধি করতে পারবেন। এবং বিস্মিত হয়ে যাবেন।

(চলবে)

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১