আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ৪

বড় করুন

ছোট করুন

শাকিল বলল – গুরুজী, আমাদেরকে এই সব বিষয়ে কথাই বা কেন বলতে হচ্ছে? সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তায় আমি যা, আমি তো তাই ই। এভাবে ভেবে নিলে কি কোনো সমস্যা হতো?
– এ বার করেছ সঠিক প্রশ্নটাই। আমাদেরকে এ নিয়ে কথাই বা কেন বলতে হচ্ছে? তোমার এই প্রশ্নটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তুমি প্রসংগটার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছ। ধন্যবাদ।
– – গুরুজী, তাহলে আমি প্রশ্নটা আবারও করছি – বিষয়টা নিয়ে আমাদেরকে ভাবতেই বা কেন হচ্ছে? তাহলে কি সবকিছু ঠিকঠাক নেই? এ বার কিন্তু ধন্যবাদ দিয়ে থেমে যাবেন না, গুরুজী।
– গুরুজী কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন – আমাদেরকে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে এ কারণে নয় যে বিষয়টা সংজ্ঞার বাইরে চলে গেছে, বরং এ কারণে যে এ নিয়ে আমাদের ভাবনায় মরিচা পড়েছে।
– – যেমন?
– – কুয়াসা প্রসারিত হচ্ছে। স্পষ্টতা হারিয়ে যাচ্ছে। পর্দা প্রলম্বিত হচ্ছে। আমরা এমন অনেক কিছুই হারিয়েছি যা আমাদের দৃষ্টিরই অংশ, বোধেরই অংশ, তথা সত্তার বর্তমানতারই অংশ। ফলে …
– – ফলে?
– – ফলে আমরা বর্তমানকেই খুঁজে ফিরছি অতীতে, বাস্তবতাকেই খুঁজে ফিরছি কল্পনায়।
– আমি বুঝতে না পারলেও অনুভব করতে পারছি।
– – মহাবিশ্ব বিবর্তিত হয়েছে। পৃথিবী রূপান্তরিত হয়েছে। জীবনের ঘটনাবলী প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। শিশু তার শৈশব যেমন হারিয়ে ফেলে তারুণ্যে, তরুণ যেমন মোড়কিত হয় যৌবনে, যৌবন যেমন ধুয়ে-মুছে যায় বার্ধক্যে, এবং সেই বার্ধক্য যেমন আবার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় অস্পষ্টভাবে স্মরণ করতে চায় শৈশবকে, তেমনি হারিয়ে যাওয়া একটা চেতনাকে খুঁজে ফিরছি খণ্ডিত কিছু ভাবনা ও ছিন্নমূল কিছু উপলব্ধির মধ্যে।
– – সবকিছু কেন হারিয়ে যায়, গুরুজী?
– – মূলত কোনো কিছুই হারিয়ে যায় না, অস্পষ্ট হয়ে যায় মাত্র। যার দৃষ্টি ই নষ্ট হয়ে গেছে তার কাছে এই অস্পষ্টতা বিলুপ্তি বই অন্য কিছু নয়।
– – কিন্তু এই কথাগুলো কি কবির উপলব্ধি নয়? বাস্তবে কি কোনো কিছুই ফিরে পাওয়া সম্ভব?
– – মানুষ সবকিছু হারিয়েছে তার মনের অস্পষ্টতার মধ্যে। ফলে কোনো কিছুই অতীত হয় নি।
– – কিন্তু এত পরিবর্তনের স্রোতের উজানে গিয়ে …কিভাবে তা সম্ভব, গুরুজী?
– – চেতনালোপই বাহ্যিক পরিবর্তন রূপে প্রতিফলিত। স্বচ্ছ চেতনের মধ্যে সবকিছুর আদি রূপ চীরবিদ্যমান।
– আমি এ কারণে হতাশ যে টাইম মেশিন এখনও উদ্ভাবিত হয় নি।
– – পরিবর্তনের উপলব্ধিকেই আমরা সময় নামে অভিহিত করি। প্রকৃত সময় হলো অনন্ত সময়, যে কারণে আল্লাহ বলেছেন যে তিনি ই সময়।
– – তাহলে দ্রুত কথাগুলো শুরু করছেন না কেন, গুরুজী? কী হারিয়েছি? কোথায় হারিয়েছি? কিভাবে তা ফিরে পাব যা হারিয়েছি বলে আপনি দাবি করছেন? কিছু যে হারিয়েছি, তারই বা প্রমাণ কি?
(চলবে

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১