ভালোবাসার শানে নুজুল
সময়: ২৭ মার্চ ২০২০, ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ
লেখক: এস.এম. জাকির হুসাইন।
উৎস: কোরানের রহস্যময় জগত
টপিক: অলৌকিকের লৌকিকতা, আধ্যাত্মিক জীবন, উন্নত চিন্তা, গল্প, ছাত্র জীবন, নারীজগত, মহাজ্ঞান, মহৎ জীবন, শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য, সঠিক মনোভাব, সমাজ ও সংস্কৃতি
বুড্ডা বলল: গুরুজী, সব তো ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে।
গুরুজী বললেন: কী ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে?
বুড্ডা: তা কি নতুন কিছু? বন্ধুত্ব, সম্পর্ক, সততা, আস্থা, ইত্যাদি। সব কিছু টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে না?
গুরুজী: তা তো দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কেনো যাচ্ছে বলে তোমার ধারণা?
বুড্ডা: এ কি আর নতুন কিছু, গুরুজী? আগের মতো তো আর কোনো কিছু নেই। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা নেই। তা না হলে কি আর অবস্থা এমন হয়? নিশ্চই এ আপনি অস্বীকার করবেন না।
গুরুজী: যা সত্য তা আমি অস্বীকার করব কেন? আগের মতো ভালোবাসা নেই। কিন্তু ভালোবাসা কি নেই?
বুড্ডা: গুরুজী, আমার আগের কথাটাই তো আপনি পরে বললেন। তাতে তো আমার কনো লাভ হল না।
গুরুজী: তোমার আগের কথাটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে, আগের মতো ভালবাসা নেই। কিন্তু ভালোবাসা কি নেই?
বুড্ডা: গুরুজী, আমার কথাটা আমি আসলে আপনার কায়দায় বুঝতে চাচ্ছিলাম না। তাছাড়া আপনি যা বলছেন সেটা তো আমার ই কথা। তাহলে কি আমি না বুঝেই প্রশ্নটা করেছি? আমি কিন্তু বোকা হয়ে যাচ্ছি।
গুরুজী: তাহলে তুমি কি বলছ আমি তোমার কথাটা আমার মতো করে না বুঝেই জবাব টা দেব?
বুড্ডা: আমি যদি বোকা হতাম তাহলেও এমনটি আশা করতাম না।
গুরুজী: ভালো। তাহলে শোনো, ভালবাসা আগের মতো নেই, কিন্তু ভালবাসা তো আছে, এখনকার মতো? কী বলো?
বুড্ডা: গুরুজী, আপনি তাই বলতে শুরু করেছেন, যা আমার মাথায় নেই। কান পেতে আছি।
গুরুজী: তুমি বলেছ সবকিছু ভেংগে খান খান হয়ে যাচ্ছে।
বুড্ডা: গুরুজী, আমি কিন্তু মিথ্যা বলিনি।
গুরুজী: আমি তোমাকে আমার সত্যের ভয় দেখাচ্ছি না। সুতরাং তোমার সত্য আমার কথার কারণে মিথ্যা হয়ে যাবে না।
বুড্ডা: আমার কান দুটো আপনার জন্য, গুরুজী।
গুরুজী: আমি শুধু তোমার কথার মাঝে লুকানো সত্যটাকেই তোমার কাছে প্রকাশ করতে চাই।
বুড্ডা: জ্বী গুরুজী, আমার প্রশ্নটা হারিয়ে যাবে আপনার জবাবের মধ্যে। আমার বলে আর কিছু থাকল না।
গুরুজী: সমস্যা নেই, জবাবটা তোমার ই হয়ে যাবে।
বুড্ডা: এতক্ষণে প্রশ্নটাই তো ভুলে গেলাম।
গুরুজী: দেখ, ভালবাসা আগের মতো নেই, কিন্তু ভালবাসা আছে। এখনকার মতো।
বুড্ডা: তাহলে সবকিছু ভেংগে পড়ছে কেনো?
গুরুজী: ভালবাসা নিজেই খান খান হয়ে গেছে। সবকিছু ভালবাসার সুতো দিয়েই মায়ের সেলাই করা নকশী কাথার মতোই বোনা। সুতোটা আছে, সেলাই টা আলগা হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ছিড়ে গেছে। কেটে গেছে।
বুড্ডা: জ্বী গুরুজী, আমি চোখ দিয়েও শুনতে পাচ্ছি।
গুরুজী: এখনো প্রতিটি মা তার সন্তানকে ভালবাসে। তাদেরকে বলো, মা হওয়ার সুযোগ ই যখন পেল, অন্যের সন্তান দেরকেও যেন সামান্য হলেও ভালবাসে।
বুড্ডা: জ্বী গুরুজী, পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি শব্দ হল মা, আর সবচেয়ে তিক্ত শব্দ হল সৎ-মা।
গুরুজী: মানুষ লোভী হয়ে গেছে, এই ভয়? দেখ, লোভ ও মূলত ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নয়। তা হল সম্পদের ভালবাসা। যে লোভী তাকে বলে দিয়ো, সে সব সম্পদের লোভ ই যেনো করে – জ্ঞান, সততা, ধৈর্য, বিশ্বাস, ইত্যাদি। তাহলে তার লোভ এর বিষ ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে।
বুড্ডা: আমি আজ থেকেই লোভী হব, গুরুজী।
গুরুজী: মানুষ মানুষ কে হিংসা করে, এই ভয়? আল্লাহ তো মানুষ্কে ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন। এই প্রতিযোগিতা বোধ ই হিংসা হিসেবে প্রকাশ পেতে চায়। তাদেরকে বলে দাও, যারা ভাল কাজ করেন তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে তারাও ভাল কাজ করুক।
বুড্ডা: ঠিক এই মুহূর্তে নিজেকেই বললাম।
গুরুজী: মানুষ হিংস্র হয়ে গেছে, এই ভয়? হিংস্রতা হল নিজের কায়িক শক্তিকে ভালবাসা। তাদেরকে বলে দাও, তারা যেন নিজেদের কু প্রবৃত্তির প্রতিও হিংস্র হয়ে ওঠে।
বুড্ডা: আমি জানি আপনি নিষ্ঠুরতা নিয়েও কিছু বলবেন।
গুরুজী: যে নিজের পরিচয় না জানার কারণে নিজেকে কেবল একটি পশু মনে করে, সেই নিষ্ঠুর হয়। বলে দাও, প্রতিটি মানুষ তার নিজের ধারণার চেয়েও বড়।
বুড্ডা: কথাটা আমাকেই বলেছেন।
গুরুজী: দেহের পশুত্ব কে ভাল না বেসে সবাই যদি যার যার অন্তরকে ভালবাসে তাহলে সব ভালবাসাই সমান হয়ে যাবে।
বুড্ডা: তাহলে তো সবাই ভালবাসার সমুদ্রেই হাবুডুবু খাচ্ছে। শুধু মিষ্টি পানির জায়গাটা পাচ্ছে না বলে তৃষ্ণা মেটাতে পারছে না।
গুরুজী: তুমি বলতে থাক, আমি শুনছি।
বুড্ডা: তাহলে তো নকশী কাথাটা এখনো মেরামত করা যায়। মায়ের হাতের কাথাটা নষ্ট হতে দেয়া ঠিক হবে না।
গুরুজী: তুমি সবাইকে সুসংবাদ দাও, আমি একটু ঘুমাই।
বুড্ডা: আমি বলতে থাকব। কেউ না শুনুক, আমার কান তো পরিষ্কার থাকবে…..