আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

সময়: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৬:২১ অপরাহ্ণ

লেখক:

উৎস: ফেসবুক ওয়াল থেকে

টপিক: , , ,

ট্যাগ: 

লেখক প্রোফাইল 

বড় করুন

ছোট করুন

আশিক বলল – গুরুজী, আজ আমরা আপনার কাছে বিশেষ কিছু প্রশ্ন নিয়ে এসেছি। আমরা আমাদের প্রশ্নের ব্যতিক্রমধর্মী জবাব আশা করছি। আপনি জানেন যে আমরা আপনার কাছে আসি কেবল ব্যতিক্রমধর্মী জবাব পাওয়ার জন্য। আমরা আশা করব আপনি আমাদেরকে আমাদের প্রশ্নের এমন জবাব দেবেন যা আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করবে।
গুরুজী বললেন – আমি নিজেকে পর্যাপ্ত জ্ঞানী মনে করি না। কিন্তু তোমরা আমার কাছে আসো দেখে তোমাদের প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়ার প্রেরণা অনুভব করি। সুতরাং তোমাদেরকে প্রশ্ন করার জন্য উৎসাহিত করছি।
আল কুরআনে আল্লাহ বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপমা ব্যবহার করেছেন। আমাদেরকে চিন্তার খোরাক প্রদান করার জন্য এমন কি মশার উদাহরণো টেনে এনেছেন। তিনি বলেছেন যে আল্লাহ মশা বা তার চেয়ে বড় কোন কিছুর উদাহরণ দিতে লজ্জা বোধ করেন না। আমি আপনার সামনে কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত উপস্থাপন করছিসঃ
আল্লাহ পাক নিঃসন্দেহে মশা বা তার চেয়ে বড় বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। বস্তুতঃ যারা বিশ্বাসী তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা সম্পূর্ণ নির্ভূল ও সঠিক। আর যারা কাফের তারা বলে, এরূপ উপমা উপস্থাপনে আল্লাহর মতলবই বা কি ছিল। এ দ্বারা আল্লাহ তা’আলা অনেককে বিপথগামী করেন, আবার অনেককে সঠিক পথও প্রদর্শন করেন। তিনি অনুরূপ উপমা দ্বারা অসৎ ব্যক্তিবর্গ ভিন্ন কাকেও বিপথগামী করেন না।
Allah disdains not to use the similitude of things, lowest as well as highest. Those who believe know that it is truth from their Lord; but those who reject Faith say: “What means Allah by this similitude?” By it He causes many to stray, and many He leads into the right path; but He causes not to stray, except those who forsake (the path),-
[মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান]
আমার প্রশ্ন হলো, আল্লাহ বিশেষ একটি জায়গায় হঠাৎ করে মশা মাছির উদাহরণ টেনে আনলেন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে মশা-মাছি প্রাণী হিসেবে যতই সাধারণ ও ক্ষুদ্র হোক না কেন, প্রাসংগিত ক্ষেত্রে তা উল্লেখ করার ক্ষেত্রে আল্লাহ কোন দ্বিধা করেন না। সংশ্লিষ্ট আয়াতটির উচ্চারণ ভঙ্গি থেকে এমনটি মনে হচ্ছিল যে তিনি হয়তো মশা মাছি এবং আরো ক্ষুদ্রতর দিকে অগ্রসর হয়ে উদাহরণ দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে তিনি মশার উল্লেখের পর এই কথাটি বললেন যে তার চেয়ে আরও বড় কোন প্রাণীর উপমা দিতে তিনি দ্বিধাবোধ করেন না। আমার কথা হলো, এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির উদাহরণ যখন টানাই হলো, তখন আরো ক্ষুদ্রতর দিকে না এগিয়ে সেখান থেকে আরও বৃহত্তর প্রাণীর দিকে কেন ইঙ্গিত করা হলো? আমি এই বিষয়ে অনেককেই প্রশ্ন করেছি, কিন্তু তারা সাধ্যমত সুন্দর জবাব দেবার চেষ্টা করলেও আমি সেই জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমি একটি জিনিস লক্ষ্য করেছি যে বিশেষ করে কোরআনের বিষয়ে সচরাচর কেউ মিথ্যা কথা বলেন না বা মিথ্যা জবাব দেন না; কিন্তু সত্য কথা আর সন্তোষজনক কথা, তথা সত্য কথা এবং সঠিক কথা এক নয়। তারা যা বলেছেন তা সত্য কথা হলেও কথাগুলিকে সঙ্গশ্লিষ্ট প্রসংগে বলে নতুন কোনো তাতপর্য সৃষ্টি করা যায় নি।
গুরুজী বললেন – বিষয়টি আসলেই নজর কাড়ার মতো । এবং এই আয়াতের উপমাটির এই বিশেষত্ব উপলব্ধি না করতে পেরে অনেকে এর ভুল অনুবাদও রয়েছে। সব ভাষাতেই ঢুকে পড়েছে এই ভুল অনুবাদ। কিন্তু একটু চিন্তা করলে এর রহস্য অনুধাবন করা সম্ভব। একটু ভেবে দেখো, আল্লাহ যদি মশা মাছির চেয়েও ক্ষুদ্রতর কোনো প্রাণীর কথা এখানে উল্লেখ করতেন, তাহলে সেই জাতীয় অধিকাংশ প্রাণী হতো অদৃশ্য যেমন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ইত্যাদি। কোরআন যে সময়ে নাযিল হয়েছে সেই সময়ে কারো কাছে এই জাতীয় ইঙ্গিত অর্থবহ হতো না। বরং আমাদের সময়েও অধিকাংশ মানুষ এই জাতীয় অদৃশ্য প্রাণীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানে না। তাছাড়া উপমা দেয়া হয় অর্থের চেয়ে অর্থময়তা বেশি সৃষ্টি করার জন্য। চেনার ভিত্তিতে জানার পথ খুলে দেয়ার জন্য। তথ্যের চেয়ে চিন্তাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য। তাই তো কোরানে উপমা রয়েছে অজস্র এবং আল্লাহ বলেছেন –
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে? [৪৭:২৪]
তবে কি তারা কুরআনকে গভীরভাবে অনুধাবন করে না? যদি তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হতে আসত, তবে তারা এতে অনেক অসঙ্গতি পেত [৫:৮২]।
মজার ব্যাপার হলো, অবিশ্বাসীদের মধ্যে অনেকেই কোরান নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সময়ে তাতে অসংখ্য ‘অসঙ্গতি’ পাচ্ছে বলে দাবি করছে এবং তা নিয়ে লক্ষ পৃষ্টার আলোচনাও সৃষ্টি করে বিশ্ব জুড়ে তা প্রচার করছে।
আর এটাই প্রমাণ করে যে তারা যাকে অসঙ্গতি বলছে তা তাদের কোরান না-বোঝার ফল মাত্র।
তাছাড়া তারা এত বেশি সংখ্যক অসঙ্গতি কোরানে খুঁজে পাচ্ছে যা কোরানের সত্যতাতকেই প্রকাশ করছে, কারণ কোনো মানুষের দ্বারা, কোনো স্বেচ্ছাচারী শিশুর দ্বারা, বা কোনো পাগলের দ্বারাও কোনো উপদেশ মুলক ও বর্ণনামূলক বাণী সৃষ্টি করে তার মধ্যে এত ‘অসঙ্গতি প্রবেশ করানো সম্ভব নয়।
শুধু কি তাই, যা তাদের কাছে অসঙ্গতি, তা কিন্তু কোটি কোটি বিশ্বাসীদের মধ্যকার বড় বড় জ্ঞানীদের কাছেও অসঙ্গতি বলে মনে হচ্ছে না।
অর্থাৎ যা দিয়ে আল্লাহ তাদের চিন্তাকে উস্কে দিতে চেয়েছেন তাকেই তারা অসঙ্গতি বলে ক্ষান্ত হচ্ছে!’
ব্যক্ষ্যমান আয়াতে আল্লাহ মশা মাছি ইঙ্গিতের সঙ্গে তার চেয়ে বড় কথাটি জুড়ে দিয়ে একই কায়দায় আমাদের সচেতনতায় আঘাত করেছেন যেন আমরা কুরআনের এই বাণী-ভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করি।
আল্লাহ কুরআনের প্রতিটি কথা এমন ভাবে সাজিয়েছেন যে তা পাঠকের মধ্যে চিন্তার উদ্রেক করে। তাইতো তিনি কুরআনেই এই কথাটি বলেছেন যে – ওদের অন্তর কি এই কোরআনের বাণী নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না?
কারো চিন্তাশক্তি যদি প্রখর নাও হয়, তবুও এমনকি হওয়া সম্ভব নয় যে সে কোরআনের কোনো টেক্সট পড়বে অথচ তা তার মধ্যে চিন্তার উদ্রেক করবে না। ফলে যার অন্তরে আগে থেকে বিশ্বাস নেই , তার চিন্তা প্রতিটি শব্দের ওপর হোঁচট খাবে এবং ফলে সে ভাববে যে এই বাণী আল্লাহর বাণী নয় বা এমনকি ব্যাকরণের বা যুক্তির নিয়ম অনুযায়ীও শুদ্ধ নয়। অন্যদিকে যার অন্তরে সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে তার মধ্যে এই বাণী এমনভাবে চিন্তা কে উসকে দেবে যে তার অন্তর গভীর থেকে আরো গভীরে প্রবেশ করতে থাকবে এবং এভাবে তার বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং তার বিশ্বাস জ্ঞানে রূপান্তরিত হবে। এটাও কোরানের একটি মুজিজা বা অ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ এই কথাটি বলেছেন যে, যে ব্যক্তি অবিশ্বাস নিয়ে কোরআন পড়তে শুরু করে আল্লাহ তার অন্তর এবং কোরআনের বাণীর মাঝে একটি পর্দা তুলে দেন।
যখন তুমি কোরআন পাঠ করো, তখন আমি তোমার মধ্যে ও পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা ফেলে দেই।
When thou dost recite the Qur’an, We put, between thee and those who believe not in the Hereafter, a veil invisible [১৭:৪৫]
দেখো, উপমার এই স্টাইলটা আল্লাহ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সৃষ্টি করেছেন। আর এ কারণে অবিশ্বাসী ও বিশ্বাসীরা এ নিয়ে কী মন্তব্য করবে তাও তিনি উল্লেখ করে রেখেছেন।
এখন আমরা বুঝতে পারছি এই আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা পূর্ণাংগ। যিনি মানুষের অন্তরের যাবতীয় রহস্য জানেন এবং একই সাথে মানুষের ভাষা যোগ্যতার এবং বুদ্ধি শক্তি ও উপলব্ধির বৈশিষ্ট্য জানেন, তার পক্ষ থেকে ছাড়া আর কার কাছ থেকে আসা সম্ভব?

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২