নাস্তিকের মনস্তত্ত্ব – ২

সময়: ২৩ মার্চ ২০২০, ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

লেখক:

উৎস: নাস্তিকের মনস্তত্ত্ব বাই - এস.এম. জাকির হুসাইন

টপিক: ,

ট্যাগ: ,

লেখক প্রোফাইল 

বড় করুন

ছোট করুন

(পূর্ব প্রকাশের পর)

প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে এমন এক সময় এসেছিল যখন এখানে ধর্মের জোয়ার চলছিল। ঠিক তখনই এখানে অত্যন্ত তত্ত্বভিত্তিক এবং সুচিন্তিত মতামতের ওপর প্রতিষ্ঠিত নাস্তিকতাবাদেরও অস্তিত্ব ছিল। নাস্তিকতাবাদ সক্রিয় রাজনৈতিক এবং সামাজনৈতিক দর্শনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা পেয়েছিল কার্ল মার্কস এর গ্রন্থগুলিতে। তথাকথিত কমিউনিস্টগণ নিজেদেরকে বস্তুবাদী ব’লে আখ্যায়িত ক’রে থাকে। এই বস্তুবাদের মূল কথা হলো – যা কিছু দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, শোনা যায়, তথা পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাই সত্য, তার ওপারে যদি কোনো সত্য থাকেও, তাহলে তাকে আগে থেকে সত্য হিসেবে ধ’রে নেয়ার কোনো দরকার নেই। বরং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণালব্ধ তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে যা কিছু যৌক্তিকভাবে ও নিরাপদভাবে জানা সম্ভব, কেবল সেটুকুকেই বিশ্বাস করতে হবে।

অর্থাৎ জ্ঞানার্জনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রতি বস্তুবাদের একটি অঙ্গীকার রয়েছে। আর এই অঙ্গীকার দ্বারা পৃথিবী অনেক লাভবানও হয়েছে। যে মুহুর্তে ধার্মিকগণ, বিশেষত ক্রিশ্চিয়ানিজম এবং ইসলামের অনেক অনুসারী, ধর্মের সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্পর্কের প্রকৃত মর্ম না বুঝতে পারার কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল, তখনই অস্তিত্বের সার্বিক ভারসাম্য রক্ষা করার প্রয়োজনে অত্যন্ত সংগত কারণে এবং স্বাভাবিকভাবেই বস্তুবাদের আবির্ভাব ঘটেছিল। এবং পৃথিবীতে বস্তুবাদের হক আদায় হয়ে গেছে।

ধার্মিক তার কুপমণ্ডকতার কারণে তার দৃষ্টি সম্পূর্ণটাই নিবদ্ধ করেছিল বেহেস্ত ও দোযখের প্রতি। এবং এক পর্যায়ে সেই বেহেস্ত পাওয়ার জন্যে তারা যখন পরকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে শেখাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করল না, তখন এখানেই তারা তা পেতে চাইল এবং আরাম-আয়েশ ভোগ-লালসা ইত্যাদিতে গা ভাসিয়ে দিল। ধর্মের নামে শুধু যা বাকি রইল, তা হলো শুধু ক্বোরআন মুখস্ত করা, হাদিস মুখস্ত করা। এবং তার মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী উপাদানও রইল: যেমন, ধর্মগুরু সেজে অর্থ রোজগার করা বা ক্বোরআনের কিছু কিছু বাণী-বক্তব্য মানুষের কাছে প্রকাশ্যে তুলে ধ’রে বিনিময় হিসেবে পয়সা রোজগার করা। অথচ আল্লাহ বলেছেন:

“আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ কর না। (সূরা বাক্বারা, আয়াত – ৪১)”

এসব দেখেশুনে সমাজের এলিট শ্রেণীভুক্ত যারা, তারা ধর্মকে আক্ষরিক অর্থে পরিত্যাগ করতে শিখল এবং বস্তুবাদের প্রতি না হলেও অন্তত ভোগ-লালসা আরাম আয়েশের প্রতি ঝুঁকে পড়ল। এবং ধর্মের জন্যে শুধু রইল সেই লোকগুলো যাদের পেটে দু’বেলা আহার জোটে না, যাদেরকে পার্থিব জীবনে সচ্ছলতা দেয়ার মতো তেমন কর্মকাণ্ড পৃথিবীতে সৃষ্টি হতো না। তথাকথিত জ্ঞানীদের অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ দেখে জ্ঞানের প্রতি তাদের বিতৃষ্ণা বেড়ে গিয়েছিল ব’লে তারা নিজেরােই অজ্ঞ থাকতে পছন্দ করেছিল। এই সব ব্যক্তিগণ ধর্মচর্চা করতেন এবং জন্মের শুরু থেকেই তারা তাদের অর্থে ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে সেই ধর্মকে শুধু নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পেতে লাগলেন। কিন্তু চারদিকের পরিস্থিতি বিমুখ। তাদেরও এমন কোনো জ্ঞান অর্জিত হয়নি যা ব্যবহার ক’রে তারা পার্থিব জীবনে রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারেন। ফলত একটি সময় পরে এই সব লোকই দলে দলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্ম ব্যবসায়ে সামিল হয়ে গেল। আজও সেই প্রক্রিয়া চলছে।

যা হোক, বস্তুবাদের মর্মার্থ না জেনেছে বস্তুবাদী, না জেনেছেন অধিকাংশ ধার্মিক। বস্তুবাদ আবশ্যকিভাবে একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, তা কোনো মতবাদ নয়।

(চলবে…)

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

নাস্তিকের মনস্তত্ত্ব – ১

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১