জ্ঞানের সূচনা : প্রভুর সমীপে কিছু প্রশ্ন – ২

সময়: ১০ মার্চ ২০২০, ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

লেখক:

উৎস: মহাজ্ঞান, বাই- এস.এম. জাকির হুসাইন।

টপিক: , ,

ট্যাগ: ,

লেখক প্রোফাইল 

বড় করুন

ছোট করুন

(পূর্ব প্রকাশের পর)

আদমকে সৃষ্টি করা হলে পর তুমি সমস্ত ফেরেশতাদেরকে সম্মিলিত করলে আদমের সামনে। এবং ফেরেশতাদেরকে বললে, “বল তো অমুক অমুক জিনিসের নাম কী? কোন জিনিস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? What is what? Which is which?” ফেরেশতারা তা বলতে পারলেন না। তখন তুমি আদমকে জিজ্ঞাসা করলে, “হে আদম! তুমি ব’লে দাও তো এই জিনিসগুলির নাম কী?”

তখন আদম (আ.) অনায়াসে, সুন্দর ক’রে, সাজিয়ে-গুছিয়ে, সেগুলির নাম ব’লে দিলেন।

তখন তুমি ফেরেশতাদেরকে ডেকে বললে, “আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে “আমি যা জানি তোমরা তা জান না?”

আর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি,’ তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার পবিত্র মহিমা ঘোষনা করি,’ তিনি বললেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জান না।’ আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন। তারপর তিনি ফেরেশতাদের সামনে সেইসব উপস্থাপন ক’রে বললেন, ‘এইসবের নাম ব’লে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’

তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোনো জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি প্রাজ্ঞ তত্ত্বজ্ঞানী।’

তিনি বললেন, ‘হে আদম! ওদের এইসবের নাম ব’লে দাও।’ যখন সে তাদের ওদের নাম ব’লে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি জানি, আর আমি জানি তোমরা যা প্রকাশ কর বা গোপন রাখ।’ (সূরা বাক্বারা, আয়াত ৩০-৩২)

ফেরেশতাগণ তো স্বীকার করলেন, “হে প্রভু! তুমি যা আমাদের শিক্ষা দিয়েছ তার বেশি তো আমাদের জানার কথা নয়। তার বেশি তো অবশ্যই আমরা জানি না।”

আমার প্রশ্ন হলো: আদমকে সৃষ্টির পর তুমি যে প্রশ্ন করলে, তার জবাব আদম কিভাবে জানলেন? তার সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মধ্যেই কি তার জ্ঞানের বিবর্তন, Knowledge Creation অন্তর্ভুক্ত ছিল? যার কারণে যখনই তিনি দৃষ্টিশক্তি তথা আমত্বকে পেয়ে গেলেন, তখনই তার মধ্যেই সবকিছুর রহস্য পেয়ে গেলেন?

আমার আরো প্রশ্ন আছে। তুমি ফেরেশতাদেরকে শেষ-মেষ আর একবার প্রমাণ সহকারে, ইঙ্গিত সহকারে, নতুন ক’রে কেন বললে – আমি কি বলিনি আমি যা জানি তোমরা তা জান না? এটা কি এ উদ্দেশ্যে যে, তুমি যেন স্পষ্টভাবে, বাহ্যিক অর্থে, তাদের সামনে আদমের শেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে পার?

হে প্রভু! নিশ্চয়ই তা সত্য। তবে আরও কি কিছু রহস্য এর মধ্যে নেই? ফেরেশতারা বলল, “নিশ্চয়ই, হে প্রভু, আমরা তার চেয়ে বেশি কিছু জানি না যা তুমি আমাদের শিক্ষা দান করেছ।” ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে এই কথাগুলি তোমাকে বলা কী প্রয়োজন হয়েছিল? ফেরেশতাগণ কি জানতেন না যে তাদের পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু জানার কথাও নয়? কেন তারা সেই কথাগুলি তোমার দিকেই ছুঁড়ে দিলেন? হে প্রভু! এর মধ্যে কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে?

তুমি যখন ফেরেশতাদেরকে বলেছিলে – আমি আদম সৃষ্টি করতে যাচ্ছি; তখন তারা কী ক’রে জানলেন যে আদম সৃষ্ট হলে পর পৃথিবীতে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হবে। আদমের স্বভাব সম্বন্ধে তারা কী ক’রে আগে থেকেই অনুমান করতে পারলেন? যে-আদম সৃষ্টই হয়নি, সৃষ্টির পর সে যে বিশেষ ধরণের আচরণ করবে, তা ফেরেশতাদের কিভাবে জানার কথা? তুমি তো আদম সৃষ্টির পরেই এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করলে যে আদমের জ্ঞান ফেরেশতাদের চেয়ে বেশি। তাহলে সেই ফেরেশতারাই আদম সৃষ্টির আগে তাঁর স্বভাব সম্পর্কে যে জ্ঞান রেখেছিলেন ব’লে প্রমাণ দিলেন, তা কী ক’রে সম্ভব হলো? এ থেকে কি এরকম কিছু বুঝা যায় না যে, ফেরেশতাদেরও কিছু কিছু বিষয়ে জ্ঞান আদমের চেয়ে বেশি হোক আর না হোক, আদমের চেয়ে অগ্রবর্তী, পূর্ববর্তী?

আমার আরো প্রশ্ন আছে। তুমি যখন আদম সৃষ্টি করলে এবং ফেরেশতাদেরকে বললে, “অমুক অমুক জিনিসের নাম ব’লে দাও” এবং তারা বলতে পারলেন না, তখন ফেরেশতারা বললেন, “নিশ্চয়ই আমরা শুধু সেটুকুই জানি যেটুকু আমাদেরকে তুমি শিক্ষা দিয়েছ”।

এই তথ্যের আলোকে এ কথা কি আদমের কিংবা ফেরেশতার তরফ থেকে বলা যায় না যে, আল্লাহ যেমন ফেরেশতাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তার তার বেশি জানতে পারে না, তেমনি আদমকে যা শিক্ষা দিয়েছেন সেও তার বেশি বা কম জানতে পারে না? না কি অন্য কিছু? তুমি তখন বললে – আমি কি বলিনি, আমি যা জানি তোমরা তা জান না? তখন সেই কথার মাধ্যমে মূলত তুমি আদমেরই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলে। এইভাবে বাহ্যিক অর্থে তুমি ফেরেশতাদেরকেও তাদের অবস্থানটা জানিয়ে দিলে। অথচ তারা কিন্তু আগেই আদমকে সিজদা করেছিল। তার পরও তোমার তরফ থেকে তাদেরকে নতুন ক’রে জানানোর প্রয়োজন হলো যে আদম সেরা। তাহলে কি এই আশংকাই তোমার মনে ছিল যে ফেরেশতারা আদমকে সিজদা ক’রেও ভবিষ্যতে এই শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করবে না? না কি অন্য কিছু? না কি এটি শুধু আদমের শ্রেষ্ঠত্বের বাহ্যিক প্রমাণ?

(চলবে…)

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১