জ্ঞানের সূচনা : প্রভুর সমীপে কিছু প্রশ্ন – ১
সময়: ৩০ জুন ২০১৮, ১১:০৬ অপরাহ্ণ
লেখক: বিভাগীয় সম্পাদক।
উৎস: মহাজ্ঞান, বাই- এস.এম. জাকির হুসাইন।
টপিক: ধর্ম ও ইসলাম, বুক রিভিউ, মহাজ্ঞান
হে আমার প্রতিপালক!
তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।
তোমার সৃষ্টির প্রতিটি একক, প্রতিটি জীব, প্রতিটি জড় তোমার সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলছে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে, অথচ তারা কেউ তা জানে না। কিংবা তারা জানে কি না তা আমরা জানি না। তুমি তোমার সৃষ্টির প্রতিটি একক আমত্বিকে লক্ষ্য ক’রে কথা বলছ এবং তারা নিজের অজান্তেই তোমার প্রশ্নের প্রতি সাড়া দিচ্ছে। অথচ তারা কেউ তা জানে না। কিছু নির্বাচিত ব্যক্তি ছাড়া। আজ আমি তোমার কাছে কিছু প্রশ্ন রাখতে চাই। অত্যন্ত মৌলিক প্রশ্ন। এ প্রশ্নের জবাব আমি পাব কি না জানি না, তবে এই মুহুর্তে প্রশ্ন করতে পারাটাকেই আমার কাছে সম্মানজনক ব’লে মনে হচ্ছে।
তুমি যে আমাকে প্রশ্ন করার তৌফিক দান করেছ, এতে আমি কৃতজ্ঞ। এ জন্যে তুমি প্রশংসিত।
হে আল্লাহ্! তুমি আদন সৃষ্টির আগেই আদম সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিলে।
তুমি নিজেকে গোপন অবস্থা থেকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলে। কিংবা হয়তো আরো সূক্ষ্মভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে তুমি নিজেকে গোপন রেখেই প্রকাশ করতে চেয়েছিলে।
আর তাই ফেরেশতাদেরকে বলেছিলে যে তুমি পৃথিবীতে তোমার খলিফা সৃষ্টি করতে যাচ্ছ। যখন সৃষ্টি সমাপ্ত হবে, এবং যখন তুমি মাটির কাঠামোয় তোমার রুহ ফুঁকে দিবে তখন যেন তারা আদমকে সিজদা করে।
“যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘আমি ছাঁচেঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি, যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তার মধ্যে আমার রুহ্ (প্রাণ) সঞ্চার করব, তখন তোমরা তাকে সিজদা করবে।’” (সূরা হিজর, আয়াত ২৮-২৯)
আমার প্রশ্ন হলো: তুমি আদম সৃষ্টি করবে কি না করবে, সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারণ তুমি তো নিজেই বিভিন্ন জায়গায় বলেছ – বিভিন্ন গ্রন্থে – যে তুমি তোমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে আদমকে সৃষ্টি করেছ। আদম তোমার ব্যক্তিগত রচনা। নিজের প্রতিকৃতি। নিজের আকৃতি। নিজের রূপ। ফলে তুমি আদমের স্বরূপ। কিন্তু সেই সৃষ্টির কাজে হাত দিয়ে সৃষ্টি সম্পন্ন করার আগেই কেন ফেরেশতাদের সঙ্গে তোমার আলোচনা করার প্রয়োজন হয়েছিল? তুমি কারোর কাছে জবাবদিহি কর না। কারো উপদেশের উপর তুমি নির্ভরশীল নও। তাহলে তাদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করাটাকে তুমি কেন গুরুত্বপূর্ণ ব’লে মনে করেছিলে?
হে প্রভু! ফেরেশতারা বলেছিলেন – তুমি কেন আদমকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছ? তারা তো পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে, মারামারি, কাটাকাটি, রক্তারক্তি করবে।
তুমি বলেছিলে: হে ফেরেশতারা! আমি যা জানি তোমরা তা জান না।
আমার প্রশ্ন হলো: হে প্রভু! ফেরেশতাদের তো এমনিতেই জানারই কথা যে তুমি যা জান তারা তা জানে না। তবুও তোমাকে কেন স্পষ্ট ক’রে বলতে হলো যে “হে ফেরেশতাগণ, আমি যা জানি তোমরা তা জান না?” তাহলে তোমার এই মন্তব্য কি তাদের প্রতি ছিল তোমার সমালোচনা, না কি শাসন, না কি পূর্বাভাস? তুমি কি এমন কোনো রহস্যের বীজ এই মন্তব্যের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলে যা পরবর্তীতে বিবর্তনের ধারায় বিশাল মর্মার্থ লাভ করতে থাকবে? এবং তা দেখেই ফেরেশতারাও শিখতে থাকবে? … না কি অন্য কিছু?
(চলবে…)