সৃষ্টিকর্তা সত্যিই আছেন!

সময়: ২৮ জুলাই ২০১৮, ১১:৫১ অপরাহ্ণ

লেখক:

উৎস: সৃষ্টিকর্তা সত্যিই আছেন - বাই এস.এম. জাকির হুসাইন।

টপিক: , ,

ট্যাগ: 

লেখক প্রোফাইল 

বড় করুন

ছোট করুন

এই সর্বপ্রথম অবরোহ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের তথ্যের আলোকে কোন ধর্মের মতবাদের মধ্যে না গিয়েই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের যৌক্তিক এবং গাণিতিক প্রমাণ।

ভূমিকা
১. সৃষ্টিকর্তা বলেই যদি কিছু না থাকেন, তাহলে আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান কেউই থাকতে পারেন না।

২. কোরান দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করলে তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আমিতো স্বয়ং কোরানকেই মানছি না। কোরানকে আমি তখনই মানতে পারব যখন সৃষ্টিকর্তাকে- এবং তা থেকে আল্লাহকে- অস্তিত্বশীল ভাবতে পারব। আগে কোরান এবং পরে সৃষ্টিকর্তা- এ হলো বিশ্বাস; অপরপক্ষে, আগে সৃষ্টিকর্তা এবং পরে কোরান- এ হলো স্পষ্ট যৌক্তিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ। প্রমাণ ছাড়া আমি কিছুই মানতে পারি না।

৩. পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্মের মধ্যে থেকে যারা সৃষ্টিকর্তাকে মেনে নিয়েছেন, তারা তাদের সেই মেনে নেওয়ার একমাত্র অবলম্বন হিসাবে বেছে নিয়েছেন বিশ্বাসকে, যুক্তিকে নয়। বলা বাহুল্য বিশ্বাস মানেই যুক্তি নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত উক্ত বিশ্বাস যুক্তির দ্বারা পুরোপুরি প্রমাণিত হচ্ছে। আজও পর্যন্ত কেউ প্রমাণ করতে পারেন নি সৃষ্টিকর্তা আছেন। একই ভাবে অবশ্য একথাও সত্য যে আজও পর্যন্ত কেউই প্রমাণ করতে পারেন নি যে সৃষ্টিকর্তা নেই। মানুষের আজন্মের দ্বিধা-দ্বন্ধ সাফ করার জন্য এর যে কোন একটিকে প্রমাণ করাই যথেষ্ট। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমরা কেউই বলতে পারি না যে সৃষ্টিকর্তা আছেন।

৪. সঠিকভাবে প্রমাণ না করা পর্যন্ত যে- বিশ্বাস করি, তা আমাদের মানবিক অধিকার, কোন মৌলিক অধিকার নয়। অন্য কথায়, বিশ্বাস করার অধিকার একটি মানবিক অধিকার, তা কোন জ্ঞান পিপাসু নিরপেক্ষ ব্যক্তির মৌলিক অধিকার নয়। প্রশ্ন করার অধিকারই একটি মৌলিক অধিকার।

৫. অধিকন্তু, একথাও সত্য যে, আজও পর্যন্ত কেউই প্রমাণ করতে পারেন নি যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে বা অনস্তিত্বকে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং আগে প্রমাণ করতে হবে এরূপ প্রমাণের অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না। যদি থাকে, তখন প্রমাণ করা যাবে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করতে হবে কি না।

৬. তবে এ জাতীয় কিছু যৌক্তিক প্রমাণ প্রচলিত আছে যা চুড়ান্ত না হলেও যার জবাব দেয়া খুব শক্ত:
সৃষ্টিকর্তাকে যদি থাকতেই হয় তাহলে নিঃসন্দেহে তাকে হতে হবে সর্বশক্তিমান এবং অনন্ত। কিন্তু যদি দেখানো যায় যে তার কমপক্ষে একটি অক্ষমতা আছে, তাহলে তাকে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা হিসাবে স্বীকার করা যুক্তিসংগত হবে না। তাকে যদি অনন্তকাল ধ’রে অস্তিত্বশীল থাকতে হয় তাহলে তার একটি ক্ষমতা থাকা সম্ভব নয়: তিনি নিজেকে ধ্বংস করতে পারেন না। এই না পারাটাই তার একটি অক্ষমতা, যার কারণে তিনি সৃষ্টিকর্তা নন। আর যদি তিনি নিজেকে ধ্বংস করতে পারতেন, তাহলে তিনি নশ্বর বা ধ্বংসশীল। আর নশ্বর ব’লেই তিনি সৃষ্টিকর্তা নন। সুতরাং সৃষ্টিকর্তা ব’লে কিছুই নেই।

এগুলি ছিল সৃষ্টিকর্তার অনস্তিত্ব সম্বন্ধে নাস্তিকদের মন্তব্য। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অনেক নাস্তিক আছেন যারা যথাযোগ্য প্রমাণ পেলে সঠিক ধর্মের ছায়াতলে এসে নিজেকেউ আনন্দিত করতেন এবং ধর্মের ও মানবজাতির সেবা করতেন। অধিকন্তু তথাকথিত অনেক ধার্মিকের এবং ধর্ম সম্প্রদায়ের মানবতাবিরোধী এবং ধর্মবিরোধী আচরণের নগ্নরূপ দেখে অনেক সচেতন জ্ঞানী ব্যক্তি ঘৃনায় নাস্তিকতার পথ বেচে নিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় নাস্তিকেরও কিছু ঘৃণ্য নগ্নরূপ আছে। কয়েকটি আমি উল্লেখ করছি।

১. ধার্মিকদের উপর তারা যে- বিভক্তির দোষ আরোপ করতেন, তা থেকে তারাও মুক্ত নন। বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ করছি যে নাস্তিকেরও বিভিন্ন রূপ আছে, এবং তাদের মধ্যে ঠিক সেই নাস্তিকতা কেন্দ্রিক বিরোধও লক্ষ্য করা যায়। মৌলবাদ ব’লে তারা যাকে বুঝান, সেই দোষে তারাও দোষী।

২. বিশ্বাস যদি নিস্ক্রীয় কোন মনোভাব হয়ে থাকে তাহলে অবিশ্বাসও তাই। প্রমাণবিহীন বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস সমান দোষের, নিঃসন্দেহে। অবিশ্বাস করার অধিকার যদি তারা ভোগ করতে চান তাহলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অপ্রমাণ করার দায়িত্বও তাদের উপর বর্তায়- যদি অবশ্য তারা সত্যিকার অর্থে “প্রগতিশীল এবং জ্ঞান পিপাসু” হয়ে থাকেন। অন্যথায় অন্তত মুক্ত চিন্তার ধার্মিকদের ধর্মবিশ্বাসের উপর আঘাত হানার অধিকার তাদের নেই।

আরেকটি বিষয় হলো, আজীবন জ্ঞান সাধনা ক’রে বিজ্ঞান চর্চা করার পর যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব খুজে না পেয়ে নাস্তিক হতে ‘বাধ্য’ হন তাদের মুখে ‘আমি নাস্তিক’ কথাটি কিছুটা মানায় বটে, কারণ তিনি অনেক খুজেও তাকে পাননি। কিন্তু আমাদের দেশে এবং বিশেষত ভারতে কিছু কিছু জ্ঞানী নামধারী ব্যক্তি আছেন যারা নিজেদেরকে প্রভাবশালী ব’লে পরিচয় দেন এবং মুক্ত চিন্তার মানুষ ব’লে ভাবেন। তারা কেবল অতীতের কিছু ব্যর্থ মনিষীর এবং দার্শনিকের উচ্চারিত অভিযোগগুলিকে আবারও তুলে ধরেন। এবং নিজেদেরকে নাস্তিক ব’লে পরিচয় দিয়ে আত্বতৃপ্তি লাভ করেন। ভাবখানা বর্তমানে এমন হয়ে যে এরূপ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিজেকে নাস্তিক ব’লে চিহ্নিত করাটা একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ফলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে, চিন্তাশীল কবি-সাহিত্যিক লেখক ‘চিন্তাবিদ’ হ’লে নিজেকে আস্তিক ব’লে চিহ্নিত করাটা যেন তাদের কাছে এটি একটি বিরাট লজ্জাকর কাজ বলে মনে হয়। ধর্মের ‘গাজাখুরি গল্প এবং পৌরানিক কাহিনীগাথা’ তাদেরকে রীতিমত ‘মন- গড়া বানোয়াট কাহিনী পুরনো প্রত্নতাত্বিক গন্ধ দেয়’। ধর্মের নামধারী কিছু কিছু পৌরানিক গাথা কাল্পনিক ভিত্তি বিশ্লেষন করে তারা যে- সিদ্ধান্তে উপনিত হন, তার সালে প্রত্নতাত্বিক অনুষঙ্গ টেনে তারা সব ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হয়ে উঠেন। অথচ তারা একবার ভেবেও দেখেন না যে তথাকথিত ‘মৌলবাদী’র মত আরও হটকারী তড়িত- সিদ্ধান্তকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। মৌলবাদীরা চিন্তা ক’রে যা বলে, তারা চিন্তা ও গবেষনা ক’রেও একই কথা বলেছেন। তারাও কোরান দিয়ে এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে অপ্রমাণ করার চেষ্টা করেন।

মৌলবাদীদের তথাকথিত প্রগতিশীল চিন্তাবিদদের মাধ্যমে এই মিল এবং তাদের ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপ আমাকে কৈশোর থেকে ভাবিয়ে আসছে। প্রতি পদক্ষেপে সবকিছু দেখে শুনে মর্মাহত হয়েছি। ভেতরে এবং বাইরে খুজে ফিরেছি প্রকৃত সত্যকে। অবশেষে আমি বিশুদ্ধ যৌক্তিক এবং গাণিতিক উপায়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে! প্রিয় পাঠক, আমি আপনাকেও আমার এই আনন্দের অংশীদার করতে পেরে আরও বেশি আনন্দিত হব। আমার প্রমাণের ভিত্তি ছিল যুক্তি, গণিতের Field Theory এবং Set Theory, আইনষ্টাইনের Special and General Theories of Relativity, Big Bang Theory- এগুলো থেকে প্রাপ্ত পদ্ধতি এবং তথ্য এবং আমার নিজস্ব সমন্বয়। প্রমাণের সার্বিক কাঠামো ছিল Inductive- Assumption এর দোষ থেকে রেহাই পাবার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। গবেষনা- নির্ভর সকল বিজ্ঞানের পদ্ধতিও Inductive। প্রমাণের প্রক্রিয়া ছিল গণিতের Field Extension এর প্রক্রিয়া। আমি আমার তত্ত্বের নাম দিয়েছি Field Theory of the Absolute।

আমি প্রমাণে যা দেখতে পেরেছি:

  • সৃষ্টিকর্তা আছেন।
  • তিনি অসীম (মানবিয় অর্থে সময় ও স্থানের বিচারে)।
  • তিনি সর্বশক্তিমান।
  • সৃষ্টিজগতের ভাগ্য আগে থেকে নির্ধারণ করা তার পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব। (যদিও সে ব্যাপারে আমি অধিক মন্তব্য করিনি)।
  • তাঁর দ্বারা সবকিছুই সম্ভব- কারণ কোন আত্মবিরোধী (Contradiction) তাঁর কাছে আত্মবিরোধী বা অসম্ভব নয়।
  • আমরা কেবল তাঁর সন্ধান পেতে পারি তবে তাঁকে পেতে পারি না, তাঁর অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে জানতে পারি, তবে তাঁর রহস্য সম্বন্ধে কিছু জানতে পারি না। আমি এটাও প্রমাণ ক’রে দেখিয়েছি যে তা জানা সম্ভবও নয়।

আমি মনে করি প্রমাণটি চুড়ান্ত (যদিও অন্যান্য পদ্ধতিতেও সত্যটিকে প্রমাণ করা যায় কি না তা জানার জন্যও আমি অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি)। তবে তাতে কোন Assumption জনিত বা পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়ে গেছে কি না তা এই মুহুর্তে আমার চোখে ধরা পড়ার কথা নয়। তা থাকলে পড়বে অন্য কারো চোখে। তবে, নিজের ব্যাপারে আমি বলতে পারি যে, আমার কাছে প্রমাণটিকে পুরোপুরি সঠিক মনে হয়েছে।

অসিদ্ধান্তের দোলায় আর কেন ভাসবে চিন্তাশীল মানবজাতি? যদিও প্রমাণ পাওয়া এবং মেনে চলার মধ্যে রহস্যময় ব্যবধান রয়েছে, তবুও অন্তত যারা বিশ্বাসী তাদের জন্য এই প্রমাণটি হবে একটি সত্যিকারের বিজয় এবং বিরল পাওয়া- যা হয়তো আমি নিজেও পাওয়ার যোগ্যতা রাখি না।

তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের কাছে সচরাচর বিশ্বাসীগণ মর্যাদা পান না। এই প্রমাণের পর সব সন্দেহ চিরকালের মত মুছে যাবে। তখন অবিশ্বাসীরাই তাদের মর্যাদা হারাবে, যদি বিশ্বাস করার যোগ্যতা তাদের না থাকে।

উল্লেখ্য, বাংলা অংশে প্রমাণের কঠিন যৌক্তি বুনটকে ভেঙ্গে কিছুটা তরল করা হয়েছে সাধারণ পাঠকের বুঝার সুবিধার জন্য। প্রকৃত Theory-টি উপস্থাপিত হয়েছে ইংরেজি অংশে। ইংরেজি অংশে কিছু বিষয় আছে যা বাংলা অংশে দেয়া হয়নি। অবশ্য তা বাদ দিয়েও সাধারণ পাঠক বাংলা অংশেই তার আসল জিনিসটুকু পেয়ে যাবেন। আর যারা এ ব্যাপারে আরও চিন্তা করতে চান, তাঁদেরকে অনুরোধ করব ইংরেজি অংশটিকে ভালভাবে বিবেচনা করতে।

বিনীত
এস.এম. জাকির হুসাইন
নভেম্বর ০১, ১৯৯৮
ঢাকা।

মন্তব্য লিখুন

একই বিভাগে আরও

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১

ভালোবাসার শানে নুজুল

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১