ক্ষমতা ও প্রভাব

সময়: ০২ জুলাই ২০১৮, ২:৩৫ অপরাহ্ণ

লেখক:

উৎস: আজকের নেতা : সফল নেতৃত্বের শত কৌশল, বাই- এস.এম. জাকির হুসাইন।

টপিক: , ,

ট্যাগ: , , ,

লেখক প্রোফাইল 

বড় করুন

ছোট করুন

ক্ষমতা

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলা যায় : ক্ষমতা হল কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যাপৃত করার দক্ষতা। আরো ব্যাপক অর্থে, ক্ষমতা হল কোনো কাজ করার বা না-করার ব্যাপারে অপরের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করার যোগ্যতা। কিন্তু অপরের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করার যোগ্যতাকে সরাসরি ক্ষমতা (power) না ব’লে বলা হয় প্রভাব (influence)। সকল ক্ষমতার মূল ভিত্তি হল এই প্রভাব। সুতরাং আমরা প্রথমে প্রভাব এর প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করব।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা সব সময়ই কারো না কারো দ্বারা প্রভাবিত হই, কিংবা কাউকে না কাউকে প্রভাবিত করি। আপনার বন্ধু বাজারে যাচ্ছে দেখে আপনি তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে তাকে আপনার জন্য কিছু জিনিস কিনে আনতে বললেন। কাজটি তেমন কঠিন কিছু না হলেও তার জন্য আপনার বন্ধুকে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল বৈকি। তবুও সে আপনার জন্য তা করেছিল। এখন নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আপনার বন্ধুর আচরণকে (অর্থাৎ কাজ- behaviour) আপনি প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, প্রেম, স্নেহ ইত্যাদির বন্ধনে আবদ্ধ লোকেরা একে অপরের উপর এরূপ প্রভাব খাটাতে পারে। আবার, অচেনা অজানা পরিস্থিতিতে আপনি কোনো একজন লোককে আপনাকে ছোট একটি উপকার করতে বললেন। আপনি তাকে অনুরোধ করার বদলে ঔদ্ধত্যের সাথে আদেশ করেছিলেন। ফলে লোকটি আপনাকে উপেক্ষা ক’রে চ’লে গেল। এই যদি হয় বাস্তবতা, তাহলে বলা যায় যে,  লোকটিকে প্রভাবিত করার যোগ্যতা আপনার ছিল না। কিন্তু, একটু পরে, আরেকটি লোককে আপনি অত্যন্ত মার্জিতভাবে এবং চিত্তাকর্ষক ভাষায় আপনার জন্য উক্ত উপকারটুকু করার জন্য অনুরোধ করলেন সে কিছুটা কষ্ট স্বীকার ক’রেও এবং তার মূল্যবান সময় নষ্ট ক’রেও আপনার জন্য কাজটি ক’রে দিল। এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু লোকটির উপর প্রভাব খাটাতে পেরেছেন। এই প্রভাবই হল যাবতীয় ক্ষমতার মূল ভিত্তি।

আবার ধরা যাক, আপনার উপর কেউ বন্ধুক উঁচিয়ে আপনাকে কোনো কাজ করতে বলল। আপনি, উপায়ান্তর না দেখে, এবং তাকে অমান্য করার পরিণতিকে ভয় ক’রে, তার কথা মতো কাজটি করলেন। এক্ষেত্রেও আপনি উক্ত ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। সত্য যে, এক্ষেত্রে আপনি স্বেচ্ছায় কাজটি করেন নি, কিন্তু পরিস্থিতির প্রয়োজনে নিজের ইচ্ছার উপর নিজের জোর খাটাতে হয়েছে। এও এক ধরনের প্রভাব, যাকে আমরা সাধারণ অর্থে ক্ষমতা (coercive power) বলে থাকি।

নেতৃত্বের ক্ষেত্রে উভয় ধরনের প্রভাবই ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। তবে এ প্রসঙ্গে প্রভাব, ক্ষমতা, এবং জোর বা শক্তির মধ্যকার সূক্ষ্ম পার্থক্য জানা আবশ্যক। একথা ঠিক যে, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এই শব্দগুলিকে অনেক সময় একই অর্থে অনেকে ব্যবহার করেন, যেমন আমরা ক’রে থাকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কথোপকথনে। কিন্তু, চুলচেরা বিচারে না হলেও, এই শব্দগুলির মধ্যকার ভাবার্তের পার্থক্য কিছুটা জানার প্রয়োজন আছে বৈকি।

প্রভাব

আমরা আগেই জেনেছি, প্রভাব হল অপরের মধ্যে কোনো ইচ্ছা জাগিয়ে তোলার সামর্থ্য। আমরা এতক্ষণ যে-উদাহরণগুলি দেখেছি, তা থেকে প্রভাবের চরিত্র কিছুটা বুঝা গেছে। বাংলায় আমরা সচরাচর ক্ষমতা বলতে যত ধরণের শক্তিকে বুঝি, সেগুলিকে – অন্তত যতদূর পর্যন্ত তার সাথে নেতৃত্বের প্রশ্ন জড়িত – সার্বিকভাবে প্রভাব ব’লে অভিহিত করা যায়। আসলে সব মানবীয় (যান্ত্রিক নয়) ক্ষমতার উৎসেই প্রভাব। এই ব্যাপক অর্থে প্রভাবকে বুঝাতে ইংরেজিতে influence শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়। ক্ষমতা (power), প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা (authority) – এসব হল influence এর বিভিন্ন রূপ। এ কারণে, ক্ষমতার বিভিন্ন উৎস সম্বন্ধে জানতে হলে influence এর উৎস সম্বন্ধে জানা দরকার; অর্থাৎ, মানুষের ইচ্ছাকে কতভাবে প্রভাবিত করা যায় তা জানা দরকার।

অস্পষ্টতা, অনির্দিষ্ট বিতর্ক, এবং তাত্ত্বিক বিশ্লেষণগত ঝুই-ঝামেলা এড়াবার জন্য আমরা এখানে একই শব্দ “ক্ষমতা” দ্বারা বিভিন্ন ধরনের প্রভাবকে নির্দশ করলেও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তার পাশাপাশি ইংরেজি প্রতিশব্দ ব্যবহার করব।

মানুষের ইচ্ছাকে প্রভাবিত ক’রে তাকে দিয়ে নিজের বা সামগ্রিক অর্থে সবার উদ্দেশ্য হাসিল করার লক্ষ্যে কাজ করানো যায়। কিন্তু মানুষ কোনো কাজ করে প্রধানত দু’টি কারণে :

স্বেচ্ছায়, আগ্রহের সাথে, এবং

বাধ্য হয়ে, অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে।

আপনি যদি এই দু’টি উপায়ের যে কোনো উপায়ে বা একই সাথে উভয় উপায়ে কাউকে দিয়ে কোনো কাজ করাতে পারেন, তাহলে বলা যায় যে, অন্তত ঐ লোকটির উপর আপনার প্রভাব আছে। কিন্তু একটি জিনিস লক্ষ্য করার মত : অনেকে মনে করে যে, দ্বিতীয় উপায়ে কাউকে কোনো কিছু করতে পারাই হল ক্ষমতা। এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়; বরং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ক্ষমতার (বা প্রভাবের) এই উপায়টি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাছাড়া কোনো কাজ করতে মানুষ কেন বাধ্য হয় – তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৃত ক্ষমতার উৎস হল মানুষকে “স্বেচ্ছায় বাধ্য” করার দক্ষতা। অবশ্য এ ব্যাপারে আমরা একটু পরেই বিস্তারিত আলোচনা করব।

এই পর্যায়ে আমরা এটুকু বলতে পারি যে, প্রভাব হল কারো মধ্যে কোনো কাজ করার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলার দক্ষতা। যেমন, কাউকে কোনো কাজের সুফল দেখিয়ে তাকে তা করতে উৎসাহী করার দক্ষতা হল প্রভাব। আবার তার মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে তাকে দিয়ে কোনো কাজ করানোর “ইচ্ছা” (আরোপিত ইচ্ছা) জাগিয়ে তোলার দক্ষতাও প্রভাব। কিন্তু প্রভাবের কার্যকারিতা তার মধ্যে শুধু এই “ইচ্ছা” জাগিয়ে তোলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তার মধ্যে ইচ্ছা জাগিয়ে তোলার পর সে যদি কাজটি করে, তাহলে আপনার প্রভাব ক্ষমতায় পরিণত হল। অন্য কথায়, কারো মধ্যে কোনো কাজের ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েও আপনি যদি তার দ্বারা কাজটি করাতে না পারেন, তাহলে আপনি তার উপর প্রভাবশালী হয়েও ক্ষমতাবান নন। ক্ষমতা হল কাজ উৎপাদন করার দক্ষতা; শুধু (মানুষের মধ্যে) ইচ্ছার সৃষ্টি করলেই ক্ষমতাবান হওয়া যায় না। যেমন, পূর্ববর্তী একটি উদাহরণ অনুসারে, আপনার বন্ধুর আপনাকে সাহায্য করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো কারণে সে বাজার থেকে আপনার জন্য জিনিসটি বা জিনিসগুলি কিনে না আনে, তাহলে আপনি তার উপর ক্ষমতাবান নন। কিন্তু, তুলনা ক’রে দেখুন, এক্ষেত্রে জিনিসগুলি কেনার জন্য আপনি যদি আপনার চাকরকে বাজারে পাঠান, তাহলে সে কোনোক্রমেই আপনার কথা অমান্য করতে পারবে না। সে তা কিনে আনতে বাধ্য, যেহেতু সে আপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী। এক্ষেত্রে আপনি আপনার চাকরের উপর ক্ষমতাবান। কিন্তু এখানেও কথা রয়ে যায়। আপনার চাকর যদি আপনাকে অমান্য করে, তাহলে, নিঃসন্দেহে, আপনি তার উপর ক্ষমতাবান নন।

যাহোক, এ পর্যন্ত এটুকু স্পষ্ট করা গেল যে, ক্ষমতা যদিও কাজের সফলতার দ্বারা বিচার্য, তবুও কাজের সফলতা নির্ভর করে মানুষের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করার সফলতার উপর। অর্থাৎ, অন্য কথায়, প্রভাবের সফলতাই ক্ষমতা

 

মন্তব্য লিখুন

আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ২

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২৪

আত্মজ্ঞানের ভূমিকা – ১

ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৪

Instant Writing Techniques 1

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০২৪

আল-কোরআনের অজানা রহস্য – ২

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০২৪

আল-কুরআন এর অজানা রহস্য – ১